আতঙ্কে ব্যাংকাররা
খেলাপি ঋণের তথ্য গোপনসহ নানা বিষয়ে গোপনীয়তার অভিযোগ আসছে কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এর ফলে দুরবস্থায় পড়ছে পুরো ব্যাংকখাত। এরপরও এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে। কিছু কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ হলে উল্টো বিরক্ত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তারা। এমনকি সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়কে অনুষঙ্গ করে এক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তত ১০ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে শোকজ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সম্প্রতি সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন শর্ত আরোপ করা হয়ছে। গভর্নরের ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশ পাস বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সাংবাদিকরা গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মসূচি বয়কট করলে প্রবেশ পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর পরই তথ্য প্রাপ্তি বন্ধ করতে ও সাংবাদিক প্রবেশ বন্ধ করতে কয়েকটি বিভাগ তালাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তিনজন নির্বাহী পরিচালককে ডেকে ভর্ৎসনা করেন এই ডেপুটি গভর্নর। তাছাড়া ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, অফ-সাইট বিভাগ, ফরেন রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগের অন্তত ১১ জন কর্মকর্তাকে তথ্য শেয়ার করার অভিযোগে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আবার পরিচালকদের মাধ্যমেও অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান কিংবা সচিবালয়সহ অন্যনা প্রতিষ্ঠান থেকেও গগণমাধ্যম কর্মীরা তথ্য পেয়ে থাকেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢালাওভাবে যা ইচ্ছে তা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেলেঙ্কারির সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন কাজী সাইদুর রহমান। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন সময় তার সরাসরি হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ রয়েছে। তার দায়িত্বে নেই এমন সব বিভাগের সিদ্ধান্তেও হস্তক্ষেপ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) বিভাগের দায়িত্বে আছেন। এ কারমে কেউ কোনো কথা বললেই তার পদোন্নতি আটকে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।
হঠাৎ কড়াকড়ি ও কর্মকর্তাদের শোকজ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আয়নার মতো। এজন্য পরিস্থিতি বুঝেই কেবল তথ্য দিতে হয়। সব তথ্য গগণমাধ্যমে দেওয়া ঠিক না। কোনো কর্মকর্তা তথ্য দিলে তা গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়। এজন্য তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে ভীতিকর বা স্বেচ্ছাচারিতার কিছু নেই। গণমাধ্যমের তথ্য নেওয়া উচিত মুখপাত্রের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কোনো ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তার তথ্য ওই ব্যাংক থেকেও প্রকাশ হতে পারে। তবে কেন এমন নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, তা জানি না।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত