আদর্শ মুমিনের বিশেষ ১০ গুণ
মুমিনরা তাওবাকারী, ইবাদতকারী, (আল্লাহর) প্রশংসাকারী, সিয়াম (রোজা) পালনকারী বা আল্লাহর পথে ভ্রমণকারী, রুকুকারী, সিজদাকারী, সত্কাজের নির্দেশদাতা, অসত্কাজে নিষেধকারী ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী। এই মুমিনদের শুভ সংবাদ দাও। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)
তাফসির : আগের আয়াতে আল্লাহর সঙ্গে মুমিনদের ইমানি চুক্তি ও ধর্মীয় দায়বদ্ধতার কথা বলা হয়েছিল। এ আয়াতে মুমিনদের বিশেষ কিছু গুণের কথা বর্ণিত হয়েছে। একজন ইমানদার বা বিশ্বাসী মানুষ কেবল স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করলেই পার পেয়ে যাবে না। আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ ইমানদার হিসেবে বিবেচিত হতে তাকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও ধর্মীয় আরো বহু দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগের আয়াতে মুমিনদের একটি বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছিল যে তারা নিজেদের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে। এই আয়াতে মুমিনদের আরো ৯টি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতে এসব গুণ অর্জনকারী মুমিনের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
আদর্শ মুমিনের বিশেষ ১০টি গুণ
এক. ইমানদার নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করে।
দুই. ইমানদার নিজের পাপাচার থেকে তাওবা করে। মুমিনের জীবনে বারবার এমন সময় আসতে পারে, যখন সে সাময়িকভাবে আল্লাহর সঙ্গে করা তার ইমানি চুক্তির কথা ভুলে যায়। কিন্তু প্রকৃত ইমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো—এ সাময়িক ভুলে যাওয়ার হাত থেকে যখনই সে রেহাই পায় তখনই নিজের গাফিলতির পর্দা ছিঁড়ে সে বেরিয়ে আসে। তীব্র অনুশোচনা করে সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, ক্ষমা চায়। প্রতিটি পদস্খলনের পর আল্লাহর পথে ফিরে আসা ইমানের স্থিতি ও স্থায়িত্বের জানান দেয়।
তিন. ইমানদার ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। ধারাবাহিক আমল ও আনুগত্যের মাধ্যমে সে তার বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়।
চার. ইমানদার সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রশংসা করে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, সুখ ও আনন্দঘন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজি বিনিয়মাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত। অর্থাৎ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার মাধ্যমে সব ভালো কাজ পূর্ণতা লাভ করে।’ আর দুঃখ ও বেদনাময় বিষয়ে তিনি বলতেন, ‘আল-হামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা।’ (তাফসিরে মুনির)
পাঁচ. মুমিন ব্যক্তি সিয়াম (রোজা) পালন করে এবং আল্লাহর পথে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে। বিষয়টি বোঝাতে আয়াতে ‘আস-সায়েহুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হাদিসের আলোকে বেশির ভাগ তাফসিরবিদ এর অর্থ করেছেন রোজা রাখা। তবে শব্দটির মূল অর্থ ভ্রমণ করা। সে হিসেবে এই অর্থও এখানে সংগত যে ইমানদাররা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে। ধর্মীয় প্রয়োজনে হিজরত করা, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, পরিচ্ছন্ন ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করা, আল্লাহর নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং হালাল জীবিকা উপার্জন করা—সবই এই পুণ্যময় ভ্রমণের আওতাধীন।
ছয়. ইমানদাররা রুকু করে।
সাত. তারা সিজদা করে। রুকু-সিজদা বলতে এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বোঝানো হয়েছে।
আট. তারা ইমান ও আনুগত্যের পথে মানুষকে আহ্বান করে। সত্কাজের নির্দেশ দেয়।
নয়. তারা অসত্কাজে নিষেধ করে। শিরক ও পাপাচার থেকে মানুষকে বাধা দেয়।
দশ. মহান আল্লাহ শরিয়তের যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন তারা তা পুরোপুরি মেনে চলে। নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্মকাণ্ড এ সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ রাখে। এই শেষোক্ত গুণটিতে আগের সব গুণের সমাবেশ ঘটেছে।
সম্পাদনায়: উজ্জ্বল প্রধান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত