আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অত্যন্ত আন্তরিক: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা মহামারির এই কঠিন সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের মতো দেশে সেটার আরও বেশি প্রভাব পড়েছে। তারপরেও বলবো আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলেই এই অবস্থা থেকেও আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।
রোববার (৩ জুন) বেলা ১১টায় বার্ষিক কর্ম-সম্পাদন (এপিএ) চুক্তি স্বাক্ষর, এপিএ ও শুদ্ধচার পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা সময় পাকিস্তানের একটি প্রদেশ ছিল। বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। এদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রতিনিয়ত তাদের জীবনযুদ্ধ করে চলতে হতো। বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে আত্মপরিচয়ের সুযোগ পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন। একটি প্রদেশকে একটি রাষ্ট্রে উন্নীত করার জন্য শপথবাক্য থেকে শুরু করে নীতিমালাসহ যা যা প্রয়োজন ছিল সবকিছুই তাকে নতুনভাবে করতে হয়েছিল। তার মধ্যে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, সব কলকারখানা বন্ধ। যুদ্ধকালীন কোনো ক্ষেতে ফসল হয়নি।
তিনি বলেন, গোলায় যত ধান ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সবকিছুই তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। তার ওপরে তিন কোটি মানুষ গৃহহারা। এক কোটি শরণার্থী, প্রতিটি শহিদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে লাঞ্ছিত মা-বোনদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সবই জাতির পিতা মাত্র ৯ মাসে করে দিয়ে গেছেন। কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সেই সংবিধানও করে দিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদে জনপ্রশাসন যেন জনকল্যাণমুখী হয়। তাদের কাজের যেন জবাবদিহিতা থাকে সেটা যেন নিশ্চিত হয় এবং গতিশীল থাকে সেভাবেই তিনি প্রত্যেকটা দপ্তর, প্রত্যেকটা সংস্থা, প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের কার্যক্রম জনগণের জন্য করে। কারণ দীর্ঘদিন সামরিক যাতাকলে এ জাতি নিষ্পেষিত একেবারেই দিশেহারা। সেই দিশেহারা জাতিকে সাড়ে তিন বছরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে এত অল্প সময়ে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে এভাবে গড়ে তুলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘুনে ধরা সমাজকে নতুন করে গড়তে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানি কিংবা ঔপনিবেশিক সমাজব্যবস্থা কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থার গড়ে উঠাকে পরিবর্তন করে তিনি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রী করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরের পরে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের যে পালা শুরু হয়েছিল তখন বারবার কু হওয়া ও ক্ষমতা দখল এটাই হয়েছে।
তিনি বলেন, গণমানুষ সবসময় অবহেলিতই থেকে গিয়েছিল। সরকার যে জনগণের সেবা করবে এটাই যেন সবাই ভুলে গিয়েছিল। এটাই ছিল বাস্তব অবস্থা। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে। আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নেই এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করি। পরে দ্বিতীয়বারে যখন আমরা সরকারে আসি ২০০৮ সালে। তারপর আমাদের চেষ্টা ছিল কত দ্রুত এদেশের উন্নতি করা যায়।
‘আমরা যে কাজগুলো করবো সেগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে হয় জনগণের কল্যাণের জন্য হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্যই আমরা সরকারি কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থা পদ্ধতি আমরা চালু করি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমরা সেটা চালু করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় নবম বারের মতো আমাদের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।’
সরকার প্রধান বলেন, যেসব কর্মকর্তা তাদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন এবং যেসব মন্ত্রণালয় তাদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্যটা হলো আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা রাজনীতি করি আমাদের দল আছে। আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি একটা নির্বাচনে আমরা ইশতেহার ঘোষণা করি। ইশতেহারে আমরা কিভাবে একটা দেশকে একটা সমাজকে উন্নত করবো সে নির্দেশনা বা কর্ম পরিকল্পনারই এটা কাঠামো থাকে।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছি কখনই নির্বাচনী ইশতেহারকে ফেলে দেয়নি। প্রতিবারই বাজেট করার সময় সেটাকে অনুসরণ করেই কর্মপরিকল্পনা করেছি। কতটুকু আমরা সফল করতে পারলাম আর কতটুকু আরও করা বাকি আছে সেটা আমরা নির্দিষ্ট করি। আমাদের দলেরও একটা ঘোষণাপত্র থাকে গঠনতন্ত্র থাকে সেখানেও আমাদের কিছু কতগুলো দিকনির্দেশনা থাকে এবং সেটা আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করি। দলের যখন সভা হয় সেখানেও আমরা পর্যালোচনা করি।
‘তাছাড়া আমরা আরেকটি যে কাজ করেছিলাম সেটা হচ্ছে আশু মধ্যমেয়াদি কিংবা দীর্ঘ দীর্ঘমেয়াদি কি কাজ বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছিলাম। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম। পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৪১ সালে তা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
জীবনমানের পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এসব কাজের যারা জড়িত ছিল তাদের তাই ধন্যবাদ জানাই। আন্তরিকতার সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই সবাই কাজ করেছেন। যার ফলে আমরা সফল হয়েছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত