আয়করের হিসাব যেভাবে হয়
নভেম্বর মাসকে বলা হয় ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের মাস। যদিও জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আপনি রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়কর মেলা হয়। করোনার কারণে গত দু’বছর মেলার আয়োজন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে নভেম্বর মাসজুড়ে দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেল অফিস থেকে আপনি আয়কর মেলার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
করদাতার নামের প্রথম অক্ষর, কর্ম প্রতিষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষর, বাসস্থানের ঠিকানার উপর নির্ভর করে আপনি কোন কর অঞ্চলের করদাতা জেনে নিতে হবে। সাধারণত নতুন আয়করদাতাগণ একটি সমস্যায় ভোগেন তা হলো- আয়করদাতা কোন শ্রেণির করদাতা বুঝতে পারেন না। ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী ৭ ধরনের আয় করের আওতায় পড়ে।
যেমন চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি) ও কৃষি হতে আয়। অন্যান্য আরো আছে যার মধ্যে পড়তে পারে অনেক কিছু।
চাকরি থেকে প্রাপ্ত আয়ে আয়কর
সাধারণভাবে একজন চাকরিজীবী করদাতার প্রাপ্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা, পরিচারক ভাতা, সম্মানী ভাতা, ওভারটাইম ভাতা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তার প্রদত্ত চাঁদা এবং বিভিন্ন পারকুইজিট (সুবিধা) বেতন খাতের করযোগ্য আয়। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীর আয়ের খাত ভিন্নরূপে পরিগণিত হয়। সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। অবসরকালে প্রদত্ত লাম্প গ্র্যান্টসহ সরকারী বেতন আদেশে উল্লিখিত অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি যেমন, বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি করমুক্ত থাকবে। সরকারি আদেশভুক্ত নয় এমন আয় যেমন লেকচার, সভা-সেমিনারে প্রাপ্ত সম্মানী, বিদেশ ভ্রমণ থেকে প্রাপ্ত আয় ইত্যাদির আয় করের আওতাভুক্ত।
বেতনখাতে করযোগ্য আয় নিরূপণের জন্য পৃথক তফসিল রয়েছে। আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ সংশোধনের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ কর বছরে নতুন রিটার্ন ফরমের সাথে নতুন তফসিল ২৪এ প্রবর্তন করা হয়েছে। বেতন খাতে করযোগ্য আয় নির্ণয়ের জন্য উল্লিখিত নতুন রিটার্ন ফরমের তফসিল ২৪এ পূরণপূর্বক মূল রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করতে হবে ।
ব্যবসা বা পেশার আয়
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী করদাতার ব্যবসা বা পেশা খাতে সহজে আয় নিরূপণের জন্য ২০১৬-১৭ কর বছরে প্রবর্তিত নতুন রিটার্ন ফরমে তফসিল ২৪সি প্রবর্তন করা হয়েছে। যেসব করদাতা ব্যবসায় যুক্ত যেমন ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রোসারী ব্যবসা, কমিশন ব্যবসা, জুয়েলারী ব্যবসা ইত্যাদি এবং পেশার ক্ষেত্রে চিকিৎসা, আইন, কনসালটেন্সি ইত্যাদিতে যুক্ত তাঁদের জন্য উল্লিখিত নতুন আয়কর রিটার্ন ফরমের ২৮ ক্রমিকে ব্যবসা বা পেশা খাতে করযোগ্য আয় থাকলে তফসিল ২৪সি পূরণপূর্বক মূল রিটার্নের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
ব্যবসা বা পেশার আয়ের বিবরণে (লাভ ও ক্ষতি হিসাব) উল্লেখ করতে হবে । ব্যবসা বা পেশার গ্রস প্রাপ্তি বা বিক্রয় হতে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সকল খরচ বাদ দিয়ে নীট আয় নির্ণয় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, করদাতার ব্যক্তিগত খরচ বা ব্যবসা বহির্ভূত খরচ গ্রস প্রাপ্তি বা বিক্রয় হতে বাদ দেওয়া যাবে না। তাছাড়া ব্যবসার মূলধনী প্রকৃতির খরচও নীট আয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে খরচ হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না। তবে মূলধনী প্রকৃতির খরচের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ অবচয় ভাতা হিসেবে কর রেয়াত পাবেন।
সর্বনিম্ন কর কত?
করযোগ্য আয়ের খাত ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় আদায়যোগ্য করের সর্বোচ্চ পরিমাণও ভিন্ন হয়। সাধারণত ছয়টি ধাপে করের হার নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত করসীমা পর্যন্ত শূন্য হার, পরবর্তী ১ লাখের জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ২৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।
তবে করদাতার যদি ৮২সি ধারায় উল্লিখিত চূড়ান্ত করদায়ের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যূনতম কর খাতের কোনো আয় থাকে সেক্ষেত্রে শুধু আদায়যোগ্য কর দিলেই হবে না বরং এলাকাভেদে ন্যূনতম কর আদায় করতে হবে। করমুক্ত সীমার উর্ধ্বের আয়ের ক্ষেত্রে প্রদেয় ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ এলাকাভেদে নিম্নরূপ:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৪ হাজার টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার ৩ হাজার টাকা।
লেখক: এলএল.বি (অনার্স), এলএল.এম, চট্টগ্রাম জেলা জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত