ইসি নিয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নির্বাচনকালীন সরকারের বাইরে এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনায় যেতে রাজি নয় বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আসন্ন সংলাপেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ১৭ জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংলাপ করতে যাচ্ছে ইসি। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময় করে ইসি। সেখানেও অংশ নেয়নি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক ও তাদের মিত্র দলগুলোও যায়নি। এবারের সংলাপে বিএনপির শরিক এবং মিত্র দলগুলোরও অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রশ্নই ওঠে না। এ কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার থাকাকালে এ ইসির পক্ষে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এর বাইরে আমরা কোনো বিষয় নিয়ে সংলাপে বসতে চাই না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এ কমিশনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করছে। এর আগে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কয়েক ধাপে সংলাপ করেছে ইসি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ১৭ জুলাই শুরু হবে এ সংলাপ। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে প্রতিদিন সংলাপ চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি দলের সঙ্গে বসবে ইসি। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে ইসির এ কার্যক্রম শেষ হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সব ধরনের সংলাপ বর্জন করে আসছে বিএনপি। ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আনুষ্ঠানিক সংলাপেও অংশ নেয়নি তারা।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, নতুন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই বিএনপি এর সঙ্গে কিছুতেই সম্পৃক্ত ছিল না। আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এই সরকার পদত্যাগ করবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হবে, সেই সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। বিএনপির নীতিগত অবস্থান হচ্ছে, তারা আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। আলোচনা হবে শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এটাই তাদের মূল দাবি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র এক সদস্য বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানে না আসা পর্যন্ত ইসির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় কোনো সুফল আসবে না। তাছাড়া শুরু থেকে এ কমিশনের বিরোধিতা করে আসছেন তারা। এখন তাদের আহ্বানে সংলাপে যাওয়া মানে ইসিকে মেনে নেওয়া। সংলাপে অংশ নিলে রাজনৈতিকভাবেও বিএনপিকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। তাই সবকিছু বিবেচনা করেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই নেতা আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তারাই সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনের সঙ্গেই নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসবে বিএনপি। দলের এমন অবস্থানের ওপর ভিত্তি করেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদেরও সংলাপে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর আগে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ইসির মতবিনিময় সভায় যায়নি তারা। শরিক কয়েক নেতা জানান, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাওয়ার পর প্রধান শরিক বিএনপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এরপর দলীয় ফোরামে এ ব্যাপারে নেওয়া হবে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত। শরিক ছাড়াও যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি সেসব দলও যাতে ইসির সংলাপে অংশ না নেয় সে চেষ্টা চালাবে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির অনুরোধে ইভিএম বিষয়ক কর্মশালায় তারা অংশ নেয়নি বলে জানা গেছে। এবার এর ব্যতিক্রম হবে না বলে বিএনপির এক নেতা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত