ঈদুল ফিতরের আগেই বড় ধরনের সুখবর আসছে

| আপডেট :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৩  | প্রকাশিত :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৩

ঈদুল ফিতরের আগেই বড় ধরনের সুখবর পেতে চলেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে চলেছেন তাদের ২৪৪ জন। এ ছাড়া ১৮ জনকে করা হচ্ছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, সারাদেশে ৩৫২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪২৩ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির উপযুক্ত। কিন্তু প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে ২৪৪টি।

চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক ডিপিসির সভাপতি। এর বাইরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দু’জন যুগ্ম সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব খালেদা আখতার ডিপিসির সদস্য।

মাউশি থেকে জানা গেছে, সারাদেশে প্রধান শিক্ষকের সংকট এখন তীব্র। বহু জেলায় সরকারি হাই স্কুলে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। কোনো কোনো বিভাগে মাত্র দুই থেকে তিনজন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। বাকি স্কুলগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ৩৫১টি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩৩টি শূন্য। বাধ্য হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক অথবা যেখানে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই, সেখানে জ্যেষ্ঠ কোনো সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত পদ দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেবল প্রধান শিক্ষক নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদও ফাঁকা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৭৭টি পদ থাকলেও এ পদে কেউ নেই ১৫২ সরকারি স্কুলের।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক পদমর্যাদার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ১৮টি পদ বর্তমানে শূন্য। ফলে জেলাগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করারও কেউ নেই। যেসব জেলায় কোনো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নেই, সেগুলো হলো- ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, ঝালকাঠি, ভোলা, জামালপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বান্দরবান, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ।

প্রধান শিক্ষক না থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রশাসনিকসহ নানা কাজকর্মে দেখা দিয়েছে জটিলতা। পদোন্নতির অপেক্ষায় থেকে অনেকেই অবসরে চলে গেছেন, কেউ বা যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এতেও শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, প্রতিবছর শিক্ষকরা অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব শূন্য পদ পূরণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। কারণ, নিয়োগবিধি অনুসারে ফিডার পদ পূর্ণ হলে তবেই পদোন্নতি দেওয়া যায়। তবে সরকার চাইলে প্রমার্জন করেও পদোন্নতি দিতে পারে। এবার দুই বছর প্রমার্জন করায় একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।

জানা গেছে, ভয়াবহ প্রধান শিক্ষক সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার ফিডার পদ দুই বছর প্রমার্জন করে এসব শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেয়। পদোন্নতির পর এই শিক্ষকরা পদে যোগ দিলে প্রধান শিক্ষক পদের সংকট প্রায় পুরোটাই কেটে যাবে।

পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষকরা জানান, এ মুহূর্তে ২৪৪টি প্রধান শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকলেও সবকটি এখনই পূরণ হবে না। কারণ, নিয়োগবিধি অনুসারে মোট শূন্য পদের ৮০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ হবে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ এবার বেশি শূন্য থাকলেও একশ্রেণির শিক্ষকের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতেই বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কারণ, একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রশাসনিক ক্ষমতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে ঘুষ, দুর্নীতি ও এসিআর হারানোর বা গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটেছে। শিক্ষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে তদবির ও বাণিজ্য।

নতুন জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়সহ সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৮৩। পুরোনো ৩৫২টি সরকারি স্কুলের অধিকাংশ বিদ্যালয়ই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে ১৮টি জেলায় নেই কোনো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ অচলাবস্থা দূর করতেই বিশেষ এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর আগে সরকার ফিডার পদ পূর্ণ না হওয়ায় এ পদে নিয়োগ দিতে পারেনি। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হতে হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পাঁচ বছর কর্মরত থাকতে হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কেউ না থাকায় এত দিন পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এবার পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার নিয়ম দুই বছর কমিয়ে প্রমার্জন করে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একাধিক শিক্ষক বলেন, পদোন্নতি পেতে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা লাগত। এটি শিথিল করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তর হয়ে দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রমার্জন করা হয়েছে।

পদোন্নতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। সর্বশেষ বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির বৈঠকের পর গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পদোন্নতি ঘোষণার কথা ছিল। এর আগেই কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অনেক শিক্ষকের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) ‘হারিয়ে’ যায়। ফলে সর্বশেষ পদোন্নতি কমিটির ওই বৈঠক স্থগিত করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির ঘোষণা না হওয়ায় পেছনের সিরিয়ালের একাধিক শিক্ষক পদোন্নতির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। কারণ, গত তিন মাসে অন্তত ৫০-৬০ জন শিক্ষক অবসরে গেছেন।

পদোন্নতির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, পদোন্নতির ডিপিসি আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। আশা করা যাচ্ছে, ঈদের আগেই প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হবে।

কীসের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি যে সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি হয়েছে, সেই গ্রেডেশন তালিকার ভিত্তিতেই পদোন্নতি দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র চেয়েছে, আমরা তা পাঠিয়ে দিয়েছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার জন্য জল্পনা-কল্পনার কিছু নেই। নিয়মমাফিক বিধিবিধান অনুসরণ করে পদোন্নতি দেওয়া হবে।সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত