ঈদে ঢাকা-রংপুর সড়কের যানজট কমাতে উদ্যোগ

| আপডেট :  ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০২:০৭  | প্রকাশিত :  ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০২:০৭

প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঈদযাত্রা থাকে ভোগান্তির শীর্ষে। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই প্রান্ত, এলেঙ্গা, কড্ডার মোড়, হাটিকুমরুল প্রভৃতি স্থান ঘিরে যে যানজটের সৃষ্টি হয় তা গিয়ে ঠেকে ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঢাকা থেকে রংপুর-কুড়িগ্রাম পৌঁছাতে কখনো-সখনো লেগে যায় ২৪ ঘণ্টার বেশি। গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে তুলনামূলক কম।

তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। করোনা সহনীয় পর্যায়ে থাকায় ঈদে বাড়ি যাওয়া মানুষ বাড়বে কয়েকগুণ। এর মধ্যে চলছে ঢাকা-রংপুর চার লেনের কাজ। ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে তাই দুই সেতু খুলে দেওয়াসহ এরই মধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে রূপ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। বর্তমানে এই রুটে দৈনিক ১১ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। করোনা সংকটে দুই রোজার ঈদ স্বস্তি নিয়ে উদযাপন করতে পারেনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে এখন পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে দু-তিনগুণ। বিষয়টি মাথায় রেখে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদে এই রুটে ভোগান্তি কমাতে প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের নকলা ও চাঁদাইকোণা ব্রিজ খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া আরও প্রশস্ত করা হবে হাটিকুমরুল মোড়। যাতে যানবাহন আটকে না থাকে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এই সড়কে বর্তমানে দৈনিক ১১ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদে এই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা তিণগুণ হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা আছে। তবে মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কোন কোন জায়গায় সমস্যা হবে আমাদের জানা আছে। সেজন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের দুটি ব্রিজ নকলা ও চাঁদাইকোণা খুলে দেওয়া হবে। হাটিকুমরুলে যানবাহনের চাপ থাকে বেশি। সেজন্য এটা আরও চওড়া করা হচ্ছে।’

‘কোথায় কোথায় শঙ্কা আছে আমরা জানি। সেটা মাথায় রেখে নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের) নির্দেশনায় কাজ করছি। যাতে ঈদযাত্রায় স্বস্তি আসে।’

গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন চার লেনের কাজ চলছে। সুতরাং প্রতিবন্ধকতা হওয়া স্বাভাবিক। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু নির্বিঘ্ন করা যায়। ঈদে এবার প্রচুর লোক ঢাকা ছাড়বে। সেই পরিকল্পনা সামনে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। ফ্রি হাইওয়েতে অনেক সময় বাস দাঁড়িয়ে থাকে, তাই হাইওয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সমস্যা নিরসনে চেষ্টা করছি। তারপরও যানবাহনের চাপ অনেক থাকে।’

ঈদে চালকদের প্রতি কোনো পারমর্শ আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটু জটলা হলে সবাই যেন লাইন ধরে। কেউ যাতে উল্টো দিকে না যাতায়াত করে।’

২০১৬ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ানোর ফলে এখন তা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। চার বছর পার হলেও প্রকল্পের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। ২০২১ সালের আগস্টে কাজ শেষ হওয়া কথা ছিল। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সাল করা হয়েছে। প্রকল্পটি টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে ঈদ সামনে রেখে এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়তে পারে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, মহাসড়কজুড়ে ১ হাজার ৭৩১ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩২টি সেতু, ৪৪৭ মিটারের দুটি রেলওয়ে ওভারপাস ও ১১টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এলেঙ্গায় ১ হাজার ৫৩৮ মিটার, কড্ডার মোড়ে ৩৯৬ মিটার ও গোবিন্দগঞ্জে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ চলমান।

এছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ইপিজেড ও গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ী এলাকায় নতুন করে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণকাজও চলমান। দেড় হাজার মিটারের একটি ইন্টারচেঞ্জ, ৩৯টি আন্ডারপাস, ১৮০টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কজুড়ে। চার লেনের কাজের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে পারে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের যাত্রীরা। কারণ এসব জেলার মানুষ এই রুটটি কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করেন।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের আটটি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ছয়শ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ। এই সড়কের মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডোরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত