উপলব্ধি: সরকারি চাকরি

| আপডেট :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৩  | প্রকাশিত :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১৭

সরকারি চাকরিতে যোগদানের পরে যদি মিডেল ক্লাস কাউকে বড়লোক হতে দেখেন, ৯৯% নিশ্চিত থাকবেন যে এগুলো অবৈধ ইনকাম। সাড়ে আট বছরের সরকারি চাকুরীর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সরকারি চাকরি করে বড়লোক হওয়াতো দূরের কথা, একটা মাঝারি সাইজের সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মাস চালানোই রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

সঞ্চয় দূরের কথা, লাইফ স্টাইল ম্যান্টেইন, বিলাসিতা, সামাজিকতা পালন- এগুলো করার পয়সাও থাকে না মাস শেষে। আর চিকিৎসার মত ব্যয়বহুল খাত চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্তও হতে দেখেছি সৎ সরকরি চাকরিজীবীদের।

আর সেখানে সরকারি চাকরি করে কিভাবে কেউ বড়লোক হয়, এটা আমার কাছে বড়ই রহস্যময় ঠেকে! অল্প কিছু ব্যতিক্রম আছে বটে, তবে তা সংখ্যায় খুব কম। সরকারি চাকুরী করে, আবার সংসারে সচ্ছলতাও আছে- এমন দেখলেই ধরে নিতে পারেন আলগা ইনকাম আছে। আর বিলাসিতা, দামি রেস্টুরেন্টে ট্রিট, আইফোন, বিদেশে ফ্যামিলি ট্রিপ, ফ্লাট, গাড়ি, বাড়ি, ফার্নিচার, জায়গা জমি- এসব দেখলে ৯৯% ক্ষেত্রে ধরে নিবেন দুই নাম্বারি।

আবারো বলছি- ৯৯% ক্ষেত্রে। ১% বা তারও কম লোক আছে যারা সৎভাবে বাকি অর্থ আয় করেছে কিংবা পৈত্রিক/বৈবাহিকসূত্রে পেয়েছেন। কেউ হয়তো আগে থেকেই পয়সাওয়ালা, ফ্যামিলি সচ্ছল, পারিবারিক ব্যবসা আছে অথবা স্ত্রীও ভালো ইনকাম করে বা শ্বশুর পয়সাওয়ালা, কিংবা বিদেশে ডেপুটেশনে/মিশনে ছিলেন আর নাইলে সর্বশেষ অপশন কোন লটারি জিতেছেন।

আর যদি দেখেন কোন সরকারি চাকুরিজীবির সংসারে টানাটানি তবে বুঝে নেবেন তিনি সৎ। তার লাইফস্টাইলের স্ট্যাটাসকে খাটো করে না দেখে তার আদর্শকে উচ্চতর স্থানে রাখবেন৷ তার এই অভাব লজ্জার নয় মর্যাদার পরিচায়ক। জীবন যাপনের প্রতিনিয়ত ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন যেভাবে কেঁচোর গতিতে আগায়, সেভাবে হিসেব করলে বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী হওয়ার কথা সরকারি আমলাদের। বছর শেষে খরচ বাড়ে দ্বিগুণ, আর আয় বাড়ে দেড় হাজার টাকা, কেমনে কী? সবার অংক মিলে, আমার অংক তো মিলে না!

রাষ্ট্রের ভিক্ষুক থেকে রিকশাওয়ালা- এই সবার আয় থেকে পাওয়া ট্যাক্সের টাকায় আমরা মাস শেষে বেতন পাই ভাই, বলা যায় তাদের টাকায়ই আমরা মাস চলে। পয়সাওয়ালা হওয়ার কোন সুযোগ আছে? নারীরা গদগদ খুশি না হয়ে বরং তাদের স্বামীকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার এনিভার্সারির ডায়মন্ডের নেকলেস কেনার টাকা তিনি কোথায় পেলেন?

ভাই-আপ্পিরা বাবার কাছ থেকে আইফোন গিফট পাওয়ার পর “বেস্ট ড্যাড ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড” লিখে স্ট্যাটাস দেয়ার আগে ড্যাডিকে জিজ্ঞেস করেন- আব্বা এই টাকা কোত্থেকে পাইছো?
মা-বাবারা পোলার টাকায় হজ্ব করতে যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করেন- বাপধন, এত ট্যাকা কইত্থেকে আসলো? আমাদের হজ্ব জায়েজ হবে তো?

বিয়ে করার আগে পাত্র/পাত্রীর বাপ সরকারি চাকরিজীবী শুনে গদগদ হয়ে যাবেন না, আগে দেখেন তাদের সংসারে অভাব আছে না বিলাসিতা আছে। অসৎ পয়সায় সন্তান শিক্ষিত হতে পারে কিন্তু মানুষ হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই৷ একবার এক অসৎ সরকারি চাকরিজীবীকে আক্ষেপের সুরে বলতে শুনেছিলামঃ আমার ছেলেমেয়েগুলো মানুষ হইল না।

মনে মনে বললামঃ বাপ নিজেই তো মানুষ হইতে পারে নাই, সন্তান তো পরের ব্যাপার।
সবার শেষে জাতির পিতার কথাটি মনে করিয়ে দিয়ে যাই:-
সরকারি কর্মচারীগণ জনগণের সেবক। সমস্ত সরকারী কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন।
– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সম্পাদনায়: উজ্জ্বল প্রধান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত