এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনে ভুল আর ভুল, সংশোধনেও নানা ভোগান্তি
এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নাম, জন্ম তারিখ, পিতা- মাতার নামসহ নানা ধরনের ভুলেভরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন। আর এসব ভুল সংশোধন করতে গিয়েই তারা বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অদক্ষ জনবল দিয়ে তথ্য সংগ্রহ, ডাটা এন্ট্রিকারীদের গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতাসহ আরও বেশকিছু কারণে এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। এর ফলে ভুল সংশোধন করতে গিয়ে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের অর্থের অপচয় হচ্ছে অপরদিকে এসবের সমাধান করতে গিয়ে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে অনেক সময়ও ব্যয় হচ্ছে। আর এসব ঘিরে নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত মানুষ জন্ম তারিখ, নামের বানান ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে তাদের অফিসে আসছেন। ভুলের ধরন অনুযায়ী কিছু সমস্যার সমাধান উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সমাধান হলেও আবার কিছু ভুলের সমাধানের জন্য জেলা নির্বাচন অফিস এমনকি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস পর্যন্ত যেতে হচ্ছে।
উপজেলার হলদিয়া গ্রামের মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় ডাটা এন্ট্রিকারির কাছে আমার বিএ পাসের সনদ জমা দিলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের বানান ভুল এসেছে। এখন নিজের টাকা খরচ করে সেই ভুল সংশোধন করতে হচ্ছে। এদিকে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় বিভিন্ন ভাতা বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে এবং করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহীরা অনুপযুক্ত বিবেচিত হচ্ছেন। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর টেপুরা গ্রামের মৃত মোঃ এছব সিকদারের স্ত্রী অজিফা বেগমের (৬১) সাথে। গত সেপ্টম্বর মাসে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান নির্বাচন অফিসের সার্ভারে তাকে মৃত হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা মুঠোফোনে বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীদের ভুল ও ডাটা এন্ট্রি করার সময় করণিক ভুলের কারণে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে উপযুক্ত দালিলিক প্রমাণাধি নিয়ে আমাদের কাছে আসলে এখন স্বল্প সময়ের মধ্যেই এগুলোর সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানে উপজেলা নির্বাচন অফিসের কেহ ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত নয়। তারপরেও কেহ যদি জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গড়ে শতাধিক মানুষ জন্ম নিবন্ধনের ভুলজনিত সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছেন।
পৌর এলাকার ভুক্তভোগী আবু জাফর বলেন, আমার দুই পুত্রের জন্মনিবন্ধনে আমার নামের জায়গায় ভুল লেখা হয়েছে এবং ভুল দুটি দুই রকম। বিষয়টি আগে খেয়াল না করায় আমার দুই পুত্রের স্কুল সার্টিফিকেটেও ভুল হয়েছে। যা নিয়ে এখন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। কিভাবে এর সমাধান মিলবে তা নিয়ে এখন সংশয়ে আছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি’র মাধ্যমে নিবন্ধন অথবা সংশোধনের আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে হয়রানি অথবা অতিরিক্তি অর্থ আদায়ের সুযোগ নেই। তারপরও কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত