কুসিক নির্বাচন ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নির্বাচনের ইতিহাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তার সরকার জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
একটি উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে মানুষ কেবল স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকারই প্রয়োগ করেনি, নির্বাচনটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। আমি মনে করি, নির্বাচনের ইতিহাসে এটা একটা দৃষ্টান্ত।’
জনসাধারণ যাতে তাদের ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য তার সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশেরই মধ্যেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিহিত।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে কুসিকের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি গণভবণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে এবং তাদের প্রতি যথাযখ ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার জন্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটা চাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের প্রতি আপনার যে কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে- তা আপনারা যথাযথভাবে পালন করবেন, যাতে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আপনাদের ওপর থাকে।
তিনি বলেন, যে বিশ্বাস নিয়ে আপনাকে ভোট দিয়েছে সেই বিশ্বাসে যেন কখনো চিড় না ধরে, সেই বিশ্বাস যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিশ্বাসকে ধরে রেখে আরও বিশ্বাস যাতে অর্জন করতে পারেন, সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী আরফানুল হত রিফাতকে ভার্চুয়ালি শপথ বাক্য পাঠ করান। অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের নয় জন মহিলাসহ ৩৬ জন নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ মূলত প্রযুক্তিনির্ভর এবং বেশিরভাগ দেশই তাদের নির্বাচনে প্রযুক্তি ও নির্বাচনী ভোটিং মেশিন ব্যবহার করছে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণ যেন তাদের ভোটের অধিকারটা উপভোগ করতে পারে- তা নিশ্চিত করতে যা যা করার আওয়ামী লীগ সরকার করে যাচ্ছে। কেননা আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে এবং দলটির প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
তিনি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রতিস্থাপন, ছবিসহ নির্বাচনী ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ভোটার তালিকা থেকে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে নির্বাচন ব্যাবস্থাকে স্বচ্ছ ও যুগোপযোগীকরণে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় মহাজোটের অবদানের কথার স্মরণ করেন। ’৭৫ পরবর্তী সময়ের সামরিক সরকারের অধীনে এদেশে সংঘটিত নির্বাচনের নামে প্রহসন এবং জিয়াউর রহমানের বিতর্কিত, ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনসহ খালেদা জিয়ার ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার বিহীন নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে জানিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রায় ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয় বলেও জানান সরকারপ্রধান।
‘ঋণ করে ঘি খাওয়ার পলিসি’তে তার সরকার বিশ্বাসী নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে তিনি এমনও দেখেছেন নিজের দেশের অর্থ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে সেখান থেকে আবার কমিশন খেয়ে অর্থ নিয়ে আসছে। কিন্তু, এই টাকা তো জনগণের টাকা।
দেশে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে মানুষ কীভাবে তার সুফল পাবে সেটা বিবেচনায় রাখা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোপূর্বে তার সরকার কুমিল্লার টেকসই উন্নয়নে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যদিও সে সময় কুমিল্লার মেয়র অন্য দলের ছিল।
তিনি বলেন, মেয়র কোন দলের আমরা সেটা দেখি নাই আমরা কুমিল্লার উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি।
তিনি প্রকল্প গ্রহণকালে সেটা যেন জনগণের উপযোগী হয়, সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু একটা অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য গড়ে তোলা না। এর মাধ্যমে জনগণের কী লাভ হবে, এর মধ্যদিয়ে আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কতটুকু অবদান রাখতে পারছি বা ওই এলাকার উন্নয়নে কতটুকু অবদান রাখতে পারছি। সেটাই বিবেচ্য হতে হবে।
কুমিল্লা নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে তিনি নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কথা মাথায় রাখুন আপনি যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে জনগণ সুফল পাবে এবং জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারলে এমনিতেই তারা আপনাকে ভোট দেবে।
প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি-পেট্রোল ও ডিজেল-এবং বিদ্যুতসহ দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনগণকে পরামর্শ দেন।
তিনি জনগণকে আরও ফসল ফলানোর জন্য এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান। কারণ বিশ্বের অনেক দেশই এখন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের নতুন তরঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য প্রোটোকল অনুসরণ করতে এবং করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নিতে বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে উল্লেখ করে তার কন্য শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই বিজয়ী জাতি হিসেবে এদেশের সব মানুষ তার সব রকম অধিকার ভোগ করবে। তাদের মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে। তাছাড়াও ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একেবারে অনগ্রসর জাতিসহ সবার কল্যাণে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই, বাংলাদেশ সব সময় এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায়ই গড়ে উঠবে। সব ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে, সেটা আমাদের পবিত্র কুরআন শরিফেও দেওয়া আছে। সেটা হলো, কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত দেবে না বা ধর্ম পালনে বাধা-নিষেধ দেবে না।
বাংলাদেশ সেই চেতনায়ই বিশ্বাস করে এবং সেই চেতনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত