কয়েকশ কোটি টাকার সেতু পড়ে আছে বছরের পর বছর
সেতু আছে, সংযোগ সড়ক নেই। দেশের ১২ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ১৯টি এমন সেতু দেখা গেছে। যাতায়াতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সেতু নির্মাণ করা হলেও তা স্থানীয় জনগণের কোনো উপকারেই আসছে না। কোথাও সেতুতে উঠতে মই, কোথাও কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করছেন তারা। কোনো কোনো সেতু নির্মাণের পর তাতে আর মানুষের পা পড়েনি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বছরের পর বছর।
এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেতু এলাকার বাসিন্দারা। কেন এসব সড়কে সংযোগ সড়ক নেই জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নানারকম তথ্য দিয়েছেন। কোথাও সেতুর সঙ্গে দুপাশের সংযোগ সড়কের বরাদ্দ ছিল না। কোথাও সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া সেতু তৈরি হয়ে গেলেও এর দুপাশের ভূমি নিয়ে জটিলতা থাকায় সড়ক তৈরি করা যাচ্ছে না। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু সেতু রয়েছে, যেগুলো কোনো উপকারে আসছে না। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের পোপা খালের ওপর নির্মিত সেতুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুটি এখন ধানসহ বিভিন্ন ফসল শুকানোর মাঠ হিসাবে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। এ এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান ও কমলা বেগম বলেন, প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। সামনে বর্ষা এলে দুপারের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের ফাঁসিকাটা খালের ওপর প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়। সংযোগ সড়ক না থাকায় দেড় বছর ধরে একই অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ১ বছর আগে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একই উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের দ্বীপাশা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পড়ে আছে সংযোগ সড়কের কাজ। এছাড়া দেড় বছর আগে নির্মিত কেশবপুর ইউনিয়নের উত্তর মমিনপুর এলাকার কালামিয়ার সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় হাজার হাজার বাসিন্দা।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নে ২০১২ সালে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কালভার্টের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, ৮-১০টি গ্রামের মানুষ হেঁটে যেতেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সিলেটের ওসমানীনগরে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু থাকলেও বাঁশের সাঁকোই হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা। নির্মাণের ২১ বছরেও ওই সেতুতে মানুষের পা পড়েনি। সেতুর কাজে অনিয়ম, এক পাশ দেবে যাওয়া এবং সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভার শিবপুর গ্রামে বোয়ালিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুতে উঠতে স্থানীয়রা ব্যবহার করছেন বাঁশের মই। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন ৬ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণ গাংকুল গ্রামে একটিমাত্র স্বার্থান্বেষী পরিবারের আপত্তিতে সরকারের প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু দেড় যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। নির্মিত সেতুর উভয় দিকের সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করতে না দেওয়ায় প্রায় ২৫০ পরিবার ১৮ বছর ধরে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
একই জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুও অকেজো। স্থানীয়রা বলছেন, সংশ্লিষ্টদের অপরিকল্পিত এ কাজে সরকার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জনগণ।
প্রায় দুই বছর আগে মাদারীপুরের লক্ষ্মীগঞ্জের কুমার নদের ওপর পৌনে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সেতু। কিন্তু তৈরি হয়নি দুপাশের সংযোগ সড়ক। সেতু দিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পার হলেও চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে ৬টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাকেরগঞ্জ-বরগুনা সড়কের নিয়ামিত ইউনিয়নের রামনগর এলাকার ভাড়ানি খালের ওপর নির্মিত সেতু। সংযোগ সড়ক করতে না পারায় এ সেতুর এক অংশে সাত ধাপের একটি সিঁড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে জনসাধারণ চলাচল করতে পারলেও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৫নং মাঘান ইউনিয়নে মাঘান গ্রামে মগড়া নদীর তীরবর্তী একটি খালে সেতু নির্মিত হয়েছে। কিন্তু নির্মাণের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় এ সেতুতে কেউ পা রাখতে পারেননি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত