চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরও ১০ বছর পাচ্ছেন বেতন বোনাস!
অব্যাহতি নেওয়ার পরও বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরিতে থেকে বেতন-ভাতা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে ডা. ফাতেমা দোজা নামের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ফলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সমস্যা সমাধান ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামানের নেতৃত্বের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার ওই চিকিৎসককে নিজের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, একবার সরকারি চাকরি ছাড়লে তা ফিরে পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ফলে অভিযুক্ত চিকিৎসক কীভাবে চাকরি করছেন, বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, সে বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সশরীরে আজ সচিবালয়ে ডাকা হয়েছে।
চিকিৎসক ফাতেমা দোজার বক্তব্যের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবকিছু জেনে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে ডা. ফাতেমা দোজার সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। তার মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমা দোজা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ২০০৭ সালে তিনি রেডিওলোজিস্ট পদে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে যোগ দেন। পরে ২০০৯ সালে একই প্রতিষ্ঠানে ডা. ফাতেমা দোজা (পরিচিতি নম্বর-৪২৭৩৭) মেডিকেল অফিসার পদে যোগ দেন। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পদে কর্মরত ছিলেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬ মাসের জন্য নিয়োগ পান। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি চাকরি হতে অব্যাহতি দানের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচিব বরাবরে লিখিত আবেদন করেন।
এদিকে নির্ধারিত মেয়াদের পরও বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ তার চাকরি স্থায়ী করেনি। এ সময় তিনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও প্র্যাকটিস করতেন। পরে তদবিরের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ডা. এনায়েত করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই সময়ে চেয়ারম্যান নয়, অধ্যাপক হিসাবে ছিলাম। বর্র্তমানে আমি পিআরএল শেষ করে অবসরে আছি।
তখন তার বিভাগে ডা. ফাতেমা দোজা ছিলেন কিনা মনে করতে পারছেন না। কারণ এরকম অনেকে আসছে, আবার চলেও গেছে। সঠিক তথ্য জানতে বিএসএমএমইউর তখনকার রেজিস্ট্রার বা চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ অন্যান্য কাগজপত্র থাকবে।
ওই সময় রেডিওলোজি বিভাগের প্রশাসনিকভাবে দায়িত্বে থাকা ও বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন আল আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
এছাড়া বিএসএমএমইউর তৎকালীন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, যার স্বাক্ষরিত চিঠিতে ডা. ফাতেমাকে বিএসএমএমইউতে যোগদান করতে বলা হয়, তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে বলেন বিষয়টি যেহেতু ডা. ফাতেমা দোজার সেহেতু তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল সাফী মজুমদার, যিনি অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক বরাবর দরখাস্ত দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ছয় বছর আগের ঘটনা এখন ওইভাবে বলতে পারব না। ওখান (হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) থেকে একবার চলে আসছি, এখন আর খোঁজখবর রাখি না। তিনি (ডা. ফাতেমা দোজা) ইস্তফা দিয়ে বিএসএমএমইউতে চাকরি করে আবার কীভাবে হৃদরোগে এলেন বলতে পারব না।
বর্তমান পরিচালক এবং তার সহকর্মী যারা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করেন। আমি তার অব্যাহতির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর সুপারিশ করলেও এখন সঠিকভাবে মনে করতে পারছি না। আমি থাকাকালে তিনি পুনরায় যোগদান করছেন এমনটা হওয়ারও কথা নয়।
যদি হয়ে থাকে কাগজপত্র দেখলে বোঝা যাবে। এ ব্যাপারে মেডিকেল আইনে কী আছে অবসরে যাওয়ার ব্যাপারে সেটিও বলতে পারছি না বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সূত্র: যুগান্তর
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত