‘চাল ব্যবসা করে গুলশানে বাড়ি করছেন, তবুও বলছেন লোকসান’
দেশে চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ জন্য তিনি চাল ব্যবসায়ীদের এক হাত নিয়েছেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চাল ব্যবসা করে গুলশানে বাড়ি করছেন, আবার বলছেন লোকসান। দু-একজন ব্যবসায়ীর কারণে পুরো ব্যবসায়ীরা এর দায় নেবে না।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড রুমে ‘নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে প্যাকেটজাত চালের দর বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে মত দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান চালিয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের টিমও যাচ্ছে বাজারে, আমি নিজেও বাজার পরিদর্শনে যাবো। আমাদের নিত্যপণ্যের ১৭টি আইটেম রয়েছে। এগুলোর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য তদারকি আরও বাড়াতে হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে, মানবিক হতে হবে। সুযোগ পেলেই আমি-আপনি দাম বাড়িয়ে দেবো, এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে হাতে বানানো বেকারি পণ্যের ভ্যাট নেই তাহলে কেন তার দাম বাড়বে। একটা পাউরুটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা হয়ে যাবে কেন, ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। আমরা তাদের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম ভ্যাটও প্রত্যাহার হয়ে ছিল, তবে কেন দাম বাড়ালেন।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের হয়রানি ও ধরপাকড় করা হচ্ছে।
এর জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আপনারা ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়িয়ে দেবেন, আর সরকার ধরপাকড় করবে না এটা কি হয়। এখন ধান উঠছে, দাম কমছে এ অবস্থায় চালের দাম কমার কথা। আপনি-আমি ব্যবসা করবো। তার মানে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়াবেন এটা কি হয়? আপনি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেশিন আনছেন, এতে খরচ কমার কথা, তাহলে দাম কেন বাড়বে ভাই। বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন পোলাও চালের, সেখানে মিনিটে ছয় হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আপনারা উল্টো চালের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
তিনি চাল ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা কেন মজুত করেন। এর জবাবে ব্যবসায়ীদের কয়েকজন বলেন কোনো মজুত হয়নি।
জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আপনারা যদি মজুত না করেন তাহলে কেন অভিযানের পর দাম কমে বা কমলো। তার মানে আমরা মজুত করেছি। আসলেই সংকট নয়, সবার কাছে চাল আছে। ৫-১০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে, এখনই কেন দাম বাড়বে, এটা তো আরও সাত মাস পরে বাড়বে। সুযোগ পেলেই দাম বাড়বে এটা সরকার বা আমরা কেউ সহ্য করবো না। চাল ব্যবসা করে গুলশানে বাড়ি করছেন, বিভিন্ন স্থানে আরও ৮-১০টি করে বাড়ি আছে, আবার বলছেন লোকসান। দু-একজন ব্যবসায়ীর কারণে পুরো ব্যবসায়ীরা এর দায় নেবে না।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মসলা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আপনারা কোরবানির আগে মসলার দাম বাড়াবেন না দয়া করে। গরুর বাজারও যেন ঠিক থাকে সেটাও দেখতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি তদারকি চাই।
এসময় মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, অনেকেই বলছেন খুচরায় দাম বাড়ছে, আমরা খুচরার কথা বলতে পারবো না। কিন্তু পাইকারিতে দাম বাড়েনি। আমাদের প্রতি টন এলাচে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ডিউটি ফি দিতে হয়। কেজিতে যেখানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পড়ে যায়। এক টন লবঙ্গ আনতে দিতে হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, প্রতি টন জিরায় ৯৫ হাজার, দারচিনিতে ৫২ হাজার, গোলমরিচ (সাদা) ২ লাখ ৪৭ হাজার, কিশমিশ ৮৫ হাজার এবং আলু বোখারায় ৮০ হাজার টাকা ডিউটি ফি দিতে হয়। তবে আমাদের মসলার বাজারে পণ্যের কোনো অভাব নেই। গত রোজার ঈদের মসলা এখনও বাজারে আছে।
তেলের দাম নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বন্ডটা চালু রাখতে হবে। বন্দরে যাতে কোনো তেল খালাসে দেরি না হয়। তেল দেরিতে খালাস হলেই বাজারে এর প্রভাব পড়বে। বেড়ে যাবে দাম। আপনারা তেল খালাসের বিষয়টা দেখবেন।
এসময় সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি বলেন, এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে ১৫ দিন পর পর মূল্য ঠিক করে দেওয়া যেতে পারে। যেটা পর্যালোচনা করতে হবে। মূল্য সমন্বয় করবে হয়তো মন্ত্রণালয়। তবে আগামী ঈদে হয়তো সমস্যা হবে না, আমাদের যথেষ্ট তেল সরবরাহ আছে।
মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল ইন্দোনেশিয়া থেকে আসবে, এটা আশার খবর। আমরা আশা করি এ নিয়ে সমস্যা হবে না।
তবে যেসব ব্যবসায়ীকে সাম্প্রতিক সময়ে আটক করা হয়েছে তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি দেখতে এফবিসিসিআই সভাপতির কাছে আহ্বান জানান মেঘনা গ্রুপের এই প্রতিনিধি।
পেঁয়াজ নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদ পর্যন্ত পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে দেশে। তবে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশা করছি পেঁয়াজ নিয়ে ঈদের আগে সমস্যা হবে না।
লবণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে পাঁচ লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ২২ লাখ। এখন সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ টন লবণ। তবে আমাদের এ ঘাটতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে সরকারের কাছ থেকে পরামর্শ এসেছে। আমরা লবণের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম, তবে সরকার সেটা গ্রহণ করেনি। ঘাটতি মোকাবিলায় আমদানির বিষয়টাও দেখা হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত