জাপায় বিভক্তি স্পষ্ট, শুরু হয়েছে নানা আলোচনা

| আপডেট :  ০৪ জুলাই ২০২২, ০৯:০৬  | প্রকাশিত :  ০৪ জুলাই ২০২২, ০৯:০৩

জাতীয় পার্টিতে ফের দেখা দিয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ডাকা সভাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাদের বিভক্তি আবার স্পষ্ট হয়েছে। শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন রওশন।

অভিযোগ করেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দল এলোমেলোভাবে চলছে। আর পার্টির আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনার জন্য সাবেক নেতাদের দলে ভেড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

যদিও জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্যদের শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তারা। দলের এমপিদেরও সেভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে জানানো হয়, ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদ সভা করছেন।

সেই সভায় দলের বহিষ্কৃত ও বিদিশা সিদ্দিকীর সঙ্গে যুক্তরাও অংশগ্রহণ করছেন। তাই তারা সেখানে যাননি। ওয়েস্টিনের সভা করার পর মজিবুল হক চুন্নু রওশন এরশাদকে জানিয়েছেন- কেন তারা সেখানে যাননি। একই সঙ্গে মতবিনিময় সভা যে চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কেউ ডাকতে পারেন না, সেটাও তাকে অবহিত করা হয়।

দলটির নেতারা বলছেন, রওশন এরশাদের অসুস্থতার সুযোগে কিছু লোক তাকে ব্যবহার করছেন। তিনি এসব ইচ্ছা করে বলেননি।এদিকে দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাস ব্যাঙ্ককে চিকিৎসা শেষে গত ২৭শে জুন দেশে ফিরেন রওশন এরশাদ। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিরোধী দলীয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক শোডাউন করে দলটির নেতারা। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

তবে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের বাইরে থাকা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুন তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংসদীয় এলাকা থেকে হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে সেদিন বিমানবন্দরে আসেন। জানা গেছে, দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাস ধরে ব্যাঙ্ককে চিকিৎসাধীন থাকলেও সম্প্রতি রওশনকে দেখতে যান পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তারা দেখে আসার কয়েকদিনের মাথায় রওশন দেশে ফিরেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির সাবেক একজন নেতা বলেন, দলে ক্রমে গুরুত্ব হারাচ্ছেন রওশন এরশাদ। তিনি দেশে আসায় তার অনুসারী নেতারা তৎপরতা বাড়িয়েছেন।

তাকে সামনে এনে তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় দলের ভেতরে এবং বাইরে নানা শক্তি সক্রিয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির গতিধারা কী হয় সেই এখন বোঝা না গেলেও দলটিকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। দলটির নেতারা অবশ্য বলছেন, সামনের নির্বাচনে অতীতের মতো কোনো নাটকের অংশীদার হতে চান না তারা। রওশন এরশাদের সভার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মানবজমিনকে বলেন, উনি এমনিতেই অসুস্থ, আবার দেশের বাইরে চলে যাবেন। তাই উনার সঙ্গে দেখা করার জন্য শনিবার সন্ধ্যা ৬টা সময় নিলাম। তখন পার্টির মহাসচিবও আমার সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল। পরে আবার উনার ছেলে টেলিফোন করে বললো, আম্মু বলেছেন দুপুর ১২টার সময় দলের এমপিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটা ছিল একটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। এটা কোনো সভা না। এর মধ্যে কিছু লোক আমাদের দলের এমপি এবং প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের কল করে জানালেন উনি সভা কল করেছেন। উনি অফিসিয়ালি কোনো সভা করতে পারেন না। তখন আমি দলের সিনিয়র নেতাদের পার্টি অফিসে ডাকলাম।

তারা পার্টি অফিসে এসে আমাকে জানালেন, দলের কিছু বহিষ্কৃত নেতারা মিলে সেখানে একটা সভার আয়োজন করেছে। তখন সবাই বললো, আমাদের সভায় যাওয়া ঠিক হবে না। যারা আমাদের দলের সঙ্গে শত্রুতা করছেন তাদের সঙ্গে আমরা বসতে পারি না। পরে আলাদা বসার জন্য উনাকে (রওশন) জানান দলের মহাসচিব। পরে উনার জন্য অপেক্ষা করে সবাই চলে গেছেন। যদিও পরবর্তীতে উনাকে জানানো হয়েছে যে, সময় দিলে দলের নেতারা তার সঙ্গে বসবেন। আর পার্টিতে উনাকে কোনো অসম্মান করা হয়নি।

তিনি বলেন, যেভাবে সভা ডাকা হয়েছে আমার মনে হয় না উনি এটার সঙ্গে একমত ছিলেন। সেখানে কী সভা করা হয়েছে, যেখানে আমাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। সেখানে আমাদের দলের কোনো কর্মীও ছিল না। আর উনার তো মতবিনিময় সভা করার কোনো স্কোপ নেই। রওশন এরশাদ যেসব অভিযোগ করেছেন তা ঠিক নয় দাবি করে জিএম কাদের বলেন, উনি বলেছেন- উনার অসুস্থতার সময় কেউ খোঁজখবর রাখেনি। উনার সুস্থতা কামনা করে বেশ কয়েকবার মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি। এসব বিষয় তো তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, উনি এর আগে আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন দল ভালো চলছে। কেউ কিছু বললে তুমি কিছু মনে করো না।

তুমি দল যেভাবে চালাচ্ছো আমি এটাকে সমর্থন করি। উনাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উনার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে কথা হলো- শারীরিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক রওশনকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পার্টিতে কোনো সমস্যা নেই। সবাই একসঙ্গে চলছে। মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, উনি সভা করেছেন এটা জানি। কিন্তু উনি আমাদের দলের এমপিদের সময় দিয়েছেন দুপুর ১২টায়। পরে জানলাম, দল থেকে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরকে একই সময়ে ডাকা হয়েছে। এটা জানার পর আমরা ওই সময় যাইনি। আমরা বলেছি, অন্য সময় যাবো। আর কিছু না।

তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদের কাছে আমরা সন্তানের মতো। তিনি একটা কথা বললে সেটার প্রতিক্রিয়া দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তবে আমি একটা কথাই বলতে পারি সেটা হলো- জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ম্যাডাম যেটা বলেছেন, সেটা তার দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন। কারণ তিনি তো অনেকদিন পরে এসেছেন দেশে। তাকে হয়তো কেউ উল্টাপাল্টা বলেছেন। তিনি হয়তো দলের অবস্থানটা জানেন না।

কিন্তু সারা দেশের মানুষ তো জানে জাতীয় পার্টিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এখানে এলোমেলো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সাবেক নেতাদের দলে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পার্টিতে যারা চলে গেছেন বা নিষ্ক্রিয় আছেন তারা যদি ফের দলে আসেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ওই সভায় আমার দাওয়াত ছিল। কিন্তু দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বললেন, আমরা আগে অফিসে বসে আলোচনা করে একসঙ্গে যাবো। সেখানে গিয়ে শুনলাম সভায় বহিষ্কৃতদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। দল নিয়ে রওশনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পার্টি এখন আগের অবস্থায় নেই। এটা সবাই উপলব্ধি করছে। বিভিন্ন কারণেই নেই। এর জবাব তো অনেক দেয়া যায়। এরশাদ সাহেব সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন, দলের চেয়ারম্যান ছিলেন, সো উনার সময় তো দল ভালো থাকবেই।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত