টিউশনি নিয়ে শঙ্কা, পুরো রমজানই ছুটির দাবি শিক্ষকদের
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ২০ রমজান পর্যন্ত ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিক্ষকরা পুরো রমজানই ছুটি বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শোরগোল। সোচ্চার হয়েছেন, শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারাও। ছুটি বহাল রাখার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
শিক্ষকরা বলছেন, রমজানের ছুটিতে পুরোদমে রোজা রেখে ক্লাস করার পর শিক্ষিকাদের বাড়ি ফিরে অনেক কাজ করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে ঈদের পর প্রতিদিন অতিরিক্ত এক ঘণ্টা ক্লাসের সময় বাড়ানো যেতে পারে।
এদিকে শিক্ষকদের দাবির বিরোধিতা করে অভিভাবকরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও ২০-২২ রমজান পর্যন্ত ক্লাস হতো। এবার রমজানে পুরো সময় ক্লাস হলে শিক্ষকরা প্রাইভেট বা টিউশনি করাতে পারবেন না। তাই পুরো রমজান ছুটি চাইছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০ রমজান পর্যন্ত ক্লাস নেয়ার আদেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ২০ রমজান পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালু রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।
নতুন আদেশ জারির পর শিক্ষক নেতারা বলছেন, ২০ রমজান পর্যন্ত স্কুল খোলা থাকলে মহিলা শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকারা সবচেয়ে বেশি জটিলতায় পড়বেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেশিরভাগই নারী। রোজা রেখে তাদের ক্লাস নেয়াটা কষ্টসাধ্য হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস রমজানে চালানো হবে কিনা তা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা না হলেও আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার কথা শুনছি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, তিন বছর বদলি বন্ধ। অনেকে নিজ বাসস্থান থেকে দূরে কর্মরত। এ পরিস্থিতিতে রমজানে ক্লাস নেওয়া হলে তারা রোজা রেখে পরে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস নেবেন। তারপর বাড়ি ফিরে ইফতারি তৈরি করবেন। বিষয়টা জটিল হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে তা আমরা জানি। কিন্তু এতে শিক্ষকদের দোষ নেই। রমজানের ছুটি বহাল রেখে ঈদের পর ক্লাসের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো যেতে পারে।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রমজানের ছুটি বহাল রাখার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কয়েকটি অংশের নেতারা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (তোতা-গাজী) অংশের সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম তোতা ও সাধারণ সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী এক বিবৃতিতে ছুটি বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, পবিত্র রমজানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, এমনকি অনেক শিক্ষার্থীও রোজা রাখেন। রোজা রেখে স্কুলে কাজ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বর্তমান ছুটির তালিকায়ও রমজানের ছুটি একমাস নির্ধারিত আছে। কিন্তু ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমজানের ছুটি এখনো একমাস নির্ধারিত আছে। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রমজানের ছুটি কমিয়ে আনার বিষয়টি সরকারের পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তারা এও বলছেন, ছুটি বহাল রাখার সরকারি নির্দেশনা জারি করা না হলে আগামী ২৭ মার্চ সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে।
জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহিনুর আক্তার বলেন, চৈত্রের গরমে রোজা রেখে পাঠদান, ধর্মীয় বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে শিক্ষিকাদের। ৯০ শতাংশ শিক্ষিকার নিজ নিজ পরিবারের জন্য ইফতারি তৈরি ও সেহেরি তৈরি করতে হবে। তাছাড়া মাধ্যমিক, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়, পিটিআই বন্ধ রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০ রমজান পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে রমজান মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত ছুটি বহাল রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
এদিকে শাহীন আলম নামে একজন অভিভাবক বলেন, গত দুবছর ধরে ছুটিতে থেকে শিক্ষকদের অভ্যাস বদলে গেছে। এখন রোজার ভেতরে ক্লাস নিতে তাদের সমস্যা হবে।
সাভার উপজেলার কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা রমজান মাসে সকাল থেকে কোচিং ক্লাস নেয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু স্কুল খোলা থাকলে তারা বাচ্চাদের কোচিং ক্লাস নিতে পারবেন না। কারণ রমজান মাসে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করার পর তারা প্রাইভেট পড়ানোর সময় পাবেন না। এ জন্য তারা রমজান জুড়েই ছুটি চাচ্ছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত