ঢাকার স্কুলগুলোতে ঘুরেফিরে ১১ জনই বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষক
ঢাকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরেফিরে কয়েকজন ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক হিসেবে বছরের পর বছর চাকরি করছেন। যদিও বিধান অনুসারে, প্রতি তিন বছর পর তাদের বদলি হওয়ার কথা। কিন্তু এই শিক্ষকদের অনেকে দেড় থেকে দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাজধানীতেই আছেন। কখনও বদলি করা হলে রাজধানীর ভেতরেই কোনো স্কুলে দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তাই তাদের ঢাকার বাইরে বদলি হতে হয় না।
কেন প্রধান শিক্ষকরা ঢাকায় থাকতে মরিয়া? কী আছে এখানকার স্কুলগুলোতে?- এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ঢাকার স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষকদের আয় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অনেকে বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীতে মোট ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরই ঢাকায় চাকরির মেয়াদ ৩ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে রেকর্ড গড়েছেন ১১ জন। সর্বনিম্ন ১৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৪ বছর পর্যন্ত কেউ কেউ ঘুরেফিরে ঢাকায় পদায়ন পেয়েছেন। কেউ কেউ সহকারী শিক্ষক হিসেবে ঢাকায় চাকরি শুরু করে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন, কিন্তু ঢাকার বাইরে যেতে হয়নি কখনও। দু-একজন কোনো কারণে ঢাকার বাইরে বদলি হলেও অতি অল্পকালের মধ্যেই ফিরে এসেছেন।
তারা ১১ জন :৩৮ জন প্রধান শিক্ষকের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে সর্বোচ্চ সময় ঢাকায় থাকা শীর্ষ ১১ জনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এই শিক্ষকরা হলেন- মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম (১৮ বছর), মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীন (১৯ বছর), শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান (১৩ বছর), শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা জিন্নাতুন নূর (২১ বছর), খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) মেহেরুন্নেছা (১৭ বছর), মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র মণ্ডল (২১ বছর), আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মোস্তফা কামাল (২০ বছর), তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) নুরুন্নাহার (২১ বছর), তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) শাহরীন খান রুপা (২৪ বছর) এবং গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভুইয়া (১৮ বছর)।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমল থেকে ঢাকায় চাকরি করছেন সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম। তিনি মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে আছেন টানা ১৪ বছর। ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট তিনি এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আসেন। সেই থেকে সরতে হয়নি। এর আগে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি তেজগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ছিলেন সবচেয়ে আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত গবর্নমেন্ট ল্যাবটরি হাইস্কুলে।
মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পুরোনো ঢাকার গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক, ২০০৭ থেকে ২০১৬ শেরেবাংলা নগর বালিকা এবং ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে বর্তমান স্কুলে চাকরি করছেন।
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল এবং ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে বর্তমান স্কুলে আছেন।
২১ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করা শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা জিন্নাতুন নূর ২০০০ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে; ২০০১ থেকে ২০০৭ শেরেবাংলা নগর বালিকা, ২০০৭ থেকে ২০১৬ শেরেবাংলা নগর বালক এবং ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বর্তমান বিদ্যালয়ে আছেন।
খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা ২০০০ থেকে ২০০৫ শেরেবাংলা নগর বালক, ২০০৬ থেকে ২০০৯ ধানমন্ডি কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ ঢাকার বাইরে এবং ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আছেন।
২১ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করা মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র মণ্ডলের ‘ভাগ্য’ আরও প্রসন্ন। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজিয়েট, ১৯৯৮ থেকে কিছুকাল ঢাকার বাইরে, ২০০৯ সাল থেকে ঢাকায় ফিরে ২০১০ পর্যন্ত ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, ২০১০ থেকে ২০১৪ মাউশির মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক, ২০১৪ থেকে ২০১৮ মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শহীদ মনুমিঞা হাইস্কুল এবং গত ২ অক্টোবর থেকে বর্তমান স্কুলে আছেন। ঢাকার আঞ্চলিক উপ-পরিচালক থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মোস্তফা কামাল ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০২ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২০০২ থেকে ২০০৬ ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ, ২০০৭ থেকে ২০১০ গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি, ২০১১ থেকে ২০১৪ মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক, ২০১৪ থেকে ২০১৮ শিক্ষা ভবনে মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) এবং ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে আছে বর্তমান স্কুলে।
আরেক প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানাও ঘুরেফিরে চারদলীয় জোট সরকারের আমল থেকে নানা পদে, নানাভাবে রাজধানী ঢাকায় চাকরি করছেন। তিনি মাউশিতে গবেষণা কর্মকর্তা, নরসিংদীতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পুরোনো ঢাকায় নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডিতে কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ঘুরেফিরে ২০ বছরের বেশি সময় চাকরি করছেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি জাপান ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ নিয়ে দুই বছর জাপান থাকার সুযোগ পান। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক হন। সব সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া এই প্রধান শিক্ষক গত ২ অক্টোবর থেকে তেজগাঁও শহীদ মনু মিঞা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আছেন।
তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহারের মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি রাজধানীতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে থাকাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ঘুরেফিরে তিনি ঢাকায় প্রায় ২৪ বছর। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ধানমন্ডি গবর্নমেন্ট বয়েজ, ২০০৫ থেকে ২০১০ একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, ২০১৪ থেকে ২০১৭ মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওই দিন থেকে বর্তমান স্কুলে আছেন।
পাশের স্কুল তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্রীন খান রুপার মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বর্তমান স্কুলেই তিনি টানা প্রায় ১১ বছর (২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে) আছেন। রুপা ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক, ২০০৫ থেকে ২০০৯ মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ২০১০ সাল থেকে বর্তমান স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আছেন।
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভুইয়া এই বিদ্যালয়েই দ্বিতীয় দফায় চাকরি করছেন। তিনি সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিরও সভাপতি। তিনি এর আগে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক, ২০০১ থেকে ২০১৪ বর্তমান বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে আছেন।
যা বললেন :২৪ বছর ঢাকায় চাকরি করা শাহ্রীন খান রুপা বলেন, ‘অনেকে ঢাকায় চাকরি শুরু করে ঢাকাতেই চাকরি শেষ করছেন। আগে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিন।’
২১ বছর ঢাকায় থাকা একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। ঢাকায় কেন, নরসিংদী ও ময়মনসিংহেও চাকরি করেছি।’ ২১ বছর ঢাকায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এর বেশিও তো অনেকে আছেন।’
মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম দীর্ঘকাল ঢাকায় চাকরি করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এসব কথা আর বেশিদিন শুনতে হবে না। আমার চাকরি শেষের দিকে, আর ৬ মাস আছে।’
মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীন ১৯ বছর ঢাকায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘অনেকেই এমন আছেন। আমি তো শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও হয়েছিলাম।’
কী আছে ঢাকার স্কুলগুলোতে :অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, সরকারি বেতনভাতার বাইরেও নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা। সরকারি ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে তাদের বেতন স্কেল ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। তবে চাকরিকাল দীর্ঘ হওয়ায় ঢাকার বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষকের বেতন বর্তমানে পঞ্চম গ্রেডে ৪৩০০০ টাকা। এর সঙ্গে তারা ঢাকায় অতিরিক্ত বাড়িভাড়া পান। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রধান শিক্ষকের জন্য দ্বিতল সুদৃশ্য বাসভবনও আছে। এর বাইরে খাতা দেখা ও পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে তাদের আয় হয়।
ঢাকায় প্রধান শিক্ষকের বড় আয় হয় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ক্যাম্পাস ভাড়া দিয়ে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ও বিকেল দুই বেলা নিয়োগ পরীক্ষা হয়। লাখ লাখ টাকা আয় হয় এসব পরীক্ষা থেকে।
এ ছাড়া সরকারি স্কুলগুলোর সব কেনাকাটা প্রধান শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণে। প্রতি বছর সরকারি স্কুলগুলোতে বিজ্ঞানাগারের জন্য স্লাইপ ক্যালিপার, মাইক্রোস্কোপসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান সরঞ্জামাদি কেনার জন্য সরকার বিপুল বরাদ্দ দেয়। খাতা-কলমে এসব সরঞ্জাম কেনা হয়। বাস্তবে নয়। এর বাইরে লাইব্রেরির বই কেনা, লাইব্রেরি উন্নয়ন ও কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ সরকার মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত সেশন চার্জের বাইরে বাড়তি অর্থ শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা হয়। পাশাপাশি ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট স্কুলের ফিডার শাখা চালু আছে। ফিডার শাখা হলো- সরকারি প্রাথমিক অংশের সঙ্গে সমান্তরাল আরেকটি বেসরকারি প্রাথমিক শাখা। কয়েকটি স্কুলে কলেজ শাখারও ফিডার আছে। প্রধান শিক্ষকরাই বেসরকারি অংশের আয় দেখভাল করেন।
আবার, আশপাশের বেসরকারি স্কুলের নিয়োগেও সরকারি এই প্রধান শিক্ষকরা মহাপরিচালকের প্রতিনিধি থাকেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এই মনোনয়ন দেন। এটিও অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস। স্কুলগুলোর বেসরকারি তহবিলের ব্যবস্থাপনায় থাকেন প্রধান শিক্ষকরা। এই অর্থের কোনো হিসাব সরকার নেয় না। মাউশির ২০১৪ সালের নীতিমালা অনুসারে, একটি অর্থ কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তহবিল ব্যয় করার কথা। বেশিরভাগ স্কুলেই তা করা হয় না।
‘দুটি সংকট তৈরি হয়েছে’:শিক্ষাবিদ ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ঢাকা নগরীর সরকারি বিদ্যালয়গুলোর মোটামুটি সুনাম আছে। অভিভাবকরা এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ঝুঁকে থাকেন। এসব প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘকাল কিছু প্রধান শিক্ষক পদ আঁকড়ে থাকায় দুটি সংকট তৈরি হয়েছে। এক, তাদের দক্ষতা পিছিয়ে থাকা বিদ্যালয়গুলোতে কাজে আসছে না। দ্বিতীয়ত, বাইরের যোগ্য ও দক্ষ প্রধান শিক্ষকদের ঢাকায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দীর্ঘকাল এক স্থানে থাকায় অনিয়মতান্ত্রিকতাও শিকড় গেড়ে বসছে। জনমনেও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এসব একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
কর্তৃপক্ষের দায়সারা বক্তব্য :সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকা প্রধান শিক্ষকদের তালিকা আমরা সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। শূন্য পদের তালিকাও দিয়েছি। তারা যা সিদ্ধান্ত হয়, নেবেন।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে মাউশিই তো ব্যবস্থা নিতে পারে, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বেলাল বলেন, কোনো অভিযোগ এলে অথবা গুরুতর কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে আমরা ব্যবস্থা নেব।
তবে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক দাবি করেন, আমাদের প্রধান শিক্ষকের সংকট রয়েছে। একই স্থানে অনেকদিন থাকার এটা একটা কারণ হতে পারে। আর ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ঢাকায় আসতেও চান না।
সূত্র: সমকাল
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত