ঢাবিতে যারা হামলার শিকার, তাদের নামেই মামলা

| আপডেট :  ০১ জুন ২০২২, ০৯:৪৮  | প্রকাশিত :  ০১ জুন ২০২২, ০৯:৪৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষকরা বলেন, যারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন তাদের পক্ষে না থেকে বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ত্রাসীদের পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছে।

বুধবার (১ জুন) দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ দাবিতে এক মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তারা।

মানববন্ধনে দলের সাবেক আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ বিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, গত ২২ মে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে ছাত্রদল ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে। পরে আমরা ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি যেন ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা হয়। ভিসি স্যার আমাদের কথা শুনেছেন কিন্তু কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি যদি পদক্ষেপ নিতেন তাহলে ২৪ তারিখ আবারও হামলার ঘটনা ঘটতো না। সেদিন এই সংঘর্ষ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

প্রশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সরকারদলীয় লোকের মতো বক্তব্য দিয়েছে। প্রক্টর ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর ওপর হামলা হয়েছে। যে দেশে আমরা নারী ও শিশুকে সবসময় নিরাপত্তা দেই সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর ওপর হামলা! এটা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

সিনেট সদস্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগ যে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করেনি। উল্টো তারা যারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে তাদেরই সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নির্লিপ্ততা, পক্ষপাতিত্ব ও যে ধরনের আচরণ তারা করেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ যথাযথ নিশ্চিত রাখা। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতা করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ নয়। আমরা প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি- আর কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রতি অতিউৎসাহী হয়ে অনুরাগ প্রকাশ করবেন না। যতটুকু প্রাপ্য শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের ততটুকুই প্রাপ্য নিশ্চিত করুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন।

তিনি বলেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা হামলার শিকার হয় তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়! এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছাত্রদলের যারা হামলার শিকার হয়েছে তারাই সরকারি মামলার জটিলতার শিকার হয়েছে। সরকারের কাছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রহাতে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তাদের আসামি না করে শুধু যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার তাদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে দলটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. বিগত কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
২. দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে
৩. বিগত কয়েক দিনে যেসব ছাত্র-ছাত্রী ও নেতৃবৃন্দ আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের প্রতি সমভাবে সংবেদনশীল থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে ও
৫. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান অনুষদের সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক এমরান কাইয়ুম, কলা অনুষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আল আমিন, ফার্সি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জুবায়ের মোহাম্মদ ইহসানুল হক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুজতবা রিজা, অধ্যাপক শেখ মো. ইউসুফসহ সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত