দেশের অর্থনীতিতে বড় সুখবর

| আপডেট :  ০১ জুন ২০২২, ১১:১৮  | প্রকাশিত :  ০১ জুন ২০২২, ১১:১৮

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি। তা যে কোনও সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে গত এপ্রিলে। বেড়েছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও।

রফতানি আয়
চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে রফতানি থেকে এসেছে ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ (৪.৭৪ বিলিয়ন) ডলার। যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আশা করছি চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার বেড়ে সাড়ে সাত শতাংশে দাঁড়াবে।

তিনি আরও জানান, তৈরি পোশাক খাতের এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ মার্কেট শেয়ার ১০ শতাংশ হবে।

রেমিট্যান্স
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে এপ্রিলে। এ মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারেরও বেশি। গত বছরের এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

তার আগের দুই মাস- ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

তবে মার্চে ওই সূচকে ফের গতি ফেরে। ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

গত বছরের মে’তে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর গত ১১ মাসের কোনও মাসেই এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি।

চলতি মে’র ২৬ দিনেই ১৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাসের বাকি ৫ দিনে এই হারে যোগ হলে এপ্রিলের মতো মে মাসেও এই সূচক ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আর এর মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ গত অর্থবছরের মতো উল্লম্ফনের ধারায় ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত সুস্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

ঋণ বেড়েছে
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে। গত এপ্রিলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যার মানে, ২০২১ সালের এপ্রিলের চেয়ে এই বছরের এপ্রিলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।

শুধু তাই নয়, টানা ১১ মাস ধরে (ব্যতিক্রম ফেব্রুয়ারি) বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি।

মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৬৩০ কোটি টাকায়। গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

অবশ্য চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।

অর্থবছর শেষ হতে আরও ২ মাস বাকি। যে গতিতে বাড়ছে তাতে এই সময়ের মধ্যেই এই সূচক লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত কয়েক মাস ধরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এর ফলে ব্যাংকে এখন তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। তবে বিতরণ করা ঋণের টাকা যাতে ফেরত আসে, সেদিকটা খেয়াল করে ঋণ বিতরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সূচকটি ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে ওঠে। ফেব্রুয়ারিতে হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্র ছিল হতাশাজনক। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই কমতে থাকে প্রবৃদ্ধি। গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

এরপর থেকে বাড়ছে এই প্রবৃদ্ধি। গত বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। নভেম্বরে হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

২০১১ সালে মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশে ওঠে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে।

এরপর গত দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত