নতুন আইন করতে গিয়ে ব্যর্থ হলো ইসি
ঋণ ও বিল খেলাপিদের ভোটে আটকাতে শুধু মামলাকে প্রধান্য দিতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে তাতে সম্মতি দেয়নি ব্যাংক ও সেবাখাতগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকাভুক্ত হলেই ভোটে অযোগ্য থাকবেন। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধানই বহাল রাখতে হবে।
সোমবার (৬ জুন) সকালে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ব্যাংক, সেবা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকসহ ১৪ জন বৈঠক করেন। ঋণ ও বিল খেলাপিদের ‘ছাড়’ দেওয়ার নিয়ে আইনি সংস্কার বিষয়ে এ সভা হয়।
সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আজকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশরাই বলেছেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছিলাম, এটাতে উনারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না।’ আরও একটু চিন্তা করে ‘আরপিও সংশোধন করা হবে কিনা’ সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরপিও অনুযায়ী, ঋণ ও বিল খেলাপিরা সংসদ নির্বাচনের ভোটে অযোগ্য। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার নির্ধারিত সময়ে পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সিআইবির প্রতিবেদনে যারা খেলাপি হন, তারা আর অংশ নিতে পারেন না।
কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল, সিআইবি প্রতিবেদন নয়, শুধু মামলা হলেই তাকে ভোটে অযোগ্য করার বিধান করা যেতে পারে।
সিইসির ভাষ্য, ব্যাংকের ঋণ কীভাবে আদায় করতে হবে তা ব্যাংকের ইন্টারনাল বিষয়, তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।
খেলাপিদের ‘ভিন্ন দৃষ্টিতে’ যেভাবে ছাড় দিতে চেয়েছিল ইসি
সিইসি জানান, বর্তমান বিধানে সত্যিকারের যারা খেলাপি নন, তারা অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার মৌলিক অধিকার। তাতে যেন-তেনভাবে কারও অধিকার খর্ব না করার জন্য ভিন্ন চিন্তা করেছে ইসি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনের সাবেক ছাত্র হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলাম, স্পিরিটটাকে স্পষ্ট করার জন্যে। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কোর্টে তাদের আমরা গণ্য করবো ঋণখেলাপি হিসেবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-টেলিফোন বিল নিয়ে বাহুল্য মনে হয়েছিল কমিশনের।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া যায়। নানা কারণে হয়তো জানেও না বিল খেলাপির তথ্য। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয় বিল খেলাপি বলতে চাই।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা একটা ড্রাফট করেছিলাম।…যারা জেনুইন ডিফল্টার, সত্যি সত্যি টাকা লুট করার জন্য যারা ঋণ পরিশোধ করছেন না (তারা যেন অযোগ্য হন)। ব্যাংকরা বলছেন, যেকোনও খেলাপিই সিরিয়াস ডিফল্টার। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম একটু ভিন্নভাবে।’
তিনি জানান, সভায় ব্যাংকাররা আগের বিধানটা কমফোর্টেবল বলছেন। সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতে খেলাপি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই।
ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিরা যা বলছেন
পূবালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান রুহুল আহসান বলেন, ‘ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছি আমরা। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায় তাহলে ওই অংশটি (মামলা) যুক্ত করতে পারে।’
সবার মতামত নিয়ে প্রয়োজনে আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে কমিশন আশ্বস্ত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল আহসান বলেন, ‘মামলা করতে অসুবিধা নেই। মামলা তো করা হয়। সিআইবিতে যাদের নাম থাকবে, তাদের ঋণখেলাপি বলতে হবে। মামলা করতে অনেকগুলো ধাপ থাকে। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’
ইসির প্রস্তাবে ব্যাংকরা রাজি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অবজারভেশন দিয়েছি। সিআইবি’তে যা আছে তা থাকবে। মামলার কথা রাখতে চাইলে পাশাপাশি বিদ্যমান বিধানও রাখতে হবে।
ডেসকোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমান জানান, বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। সে ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন।
নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিল খেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
‘ইসির প্রস্তাবের পর আমাদের মতামতটা জানিয়েছি। রাখবেন কি রাখবেন না তা তাদের বিষয়। বিদ্যমান আইনই থাকুক। মামলাতে আমাদের সম্মতি ছিল না।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত