নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী
অবসরে গিয়ে পেনশন বিড়ম্বনায় পড়ছেন হাজার হাজার কর্মচারী। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে পুরো পেনশন পেয়েছেন। তবে ব্যতিক্রম প্রায় ৩০ হাজার কর্মচারী। পেনশন আনুতোষিক কেটে রাখা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের দুটি পুরোনো আদেশ নতুনভাবে জারি করায় এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তার কাছে সুবিচার পাবেন বলে আশাবাদ জানিয়েছেন।
২০০৫ সালের ২০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিধিমালা জারি হয়। এতে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নিয়মিতকৃত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর উন্নয়ন প্রকল্পে চাকরিকাল তার বেতন, ছুটি, পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধাদি প্রদানসহ উন্নয়ন ও রাজস্ব উভয়ের ভিত্তিতে চাকরিকাল গণনা হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগের আলাদা দুটি আদেশে শুধু রাজস্ব খাতের সময় গণনার কথা উল্লেখ করলে জটিলতা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘উন্নয়ন প্রকল্প হইতে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা, ২০০৫’ বিধিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন চাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব হাবিবুন নাহারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাদের সমস্যা হচ্ছে, তারা যদি নিজেদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে তাহলে বিষয়টি আমরা দেখব।’
বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালের ৩০ জুন থেকে ১৯৯৭ সালের জুন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন অন্যায়ভাবে কেটে রাখা হচ্ছে। আমরা চাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত প্রচলিত বিধিমালাবহির্ভূত সুপারিশ অবিলম্বে বাতিল হোক।
তিনি বলেন, ৩০ হাজারের মতো কর্মচারীর এমন বঞ্চনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অর্থ বিভাগ থেকে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ ও ২০১১ সালের ২২ সেপ্টম্বর দুটি আদেশ জারি করা হয়। এতে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা কর্মচারীদের চাকরিকাল শুধু রাজস্ব খাতের হিসাবে গণনার কথা বলা হয়। এই আদেশ কর্মচারীরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে ২০১২ সালে আদেশ দুটি বাতিল করে প্রকল্প ও রাজস্ব উভয় অংশের সময় গণনার নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশের পরও অর্থ বিভাগের আদেশ দুটি বাতিল হয়নি। উল্টো আদালতের বাতিল করা ওই দুটি আদেশ ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর ও ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ফের বহাল করা হয়েছে। এতে সারা দেশে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর লাখ লাখ টাকার পেনশন কেটে রাখা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন আমিরুল ইসলাম। ২০১৭ সালে তিনি অবসরে গিয়ে ৪৩ লাখ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু তার পেনশন থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা কেটে রাখা হয়েছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত সরকার তার কর্মচারীরর বিরুদ্ধে নিতে পারে না। তিনি বলেন, সারা জীবন চাকরি করে পেনশন আমার অধিকার। আমাদের অনেকে এ অধিকার পেয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু অর্থ বিভাগে গিয়ে আটকে গেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। তাহলে আমরা সুবিচার পাব বলে আশা করি। সূত্র-যুগান্তর
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত