নিতে আসছে না কেউ, ১১ হাজার পাসপোর্ট পড়ে আছে
জয়নাল হক চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বাসিন্দা। জরুরি প্রয়োজনে ‘জরুরি ক্যাটাগরিতে’ পাসপোর্ট ইস্যু করতে ব্যাংকে টাকা জমা দেন। তিনি ছবি তোলা থেকে শুরু করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন জমা দেন পাসপোর্ট অফিসে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেই পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চার বছর পরও তা সংগ্রহ করা হয়নি।
অনেক দিন পাসপোর্টটি পড়ে থাকায় একেকটি পৃষ্ঠা অপরটির সঙ্গে লেগে গেছে। আর এভাবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় ও আঞ্চলিক দুই পাসপোর্ট অফিসে প্রায় ১১ হাজার তৈরিকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে। কোনোভাবেই এসব পাসপোর্ট আবেদনকারীর হদিস মিলছে না!
পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করতে আবেদনকারীর ঠিকানায় একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। এসব পাসপোর্টের বেশিরভাগই জরুরি প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করা হয়। ইস্যু করা পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ না করায় কোথায় গেল এসব পাসপোর্টধারী- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্নিষ্টদের মাঝে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশ যেতে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের হাইদকান্দি এলাকার প্রদীপ বড়ূয়া। তিনি ব্যাংকে জমা দেন ছয় হাজার ৯০০ টাকা।
সেই পাসপোর্ট মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এলেও তা এখনও পড়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা বেশকিছু পাসপোর্টের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হওয়ার পথে। চট্টগ্রামের দুই পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পাসপোর্টের আবেদনকারীরা নগরের কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, বন্দর, ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, পতেঙ্গা, হালিশহর এবং বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, রাউজান, ভূজপুর ও সন্দ্বীপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, আবেদন ফরমে দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করলেও পাসপোর্ট নিতে আসেননি কোনো আবেদনকারী। দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্টগুলো অফিসে পড়ে থাকায় জমছে ময়লার স্তূপ। বেশকিছু পাসপোর্টের মেয়াদও শেষের দিকে। তবে আবেদনকারীদের কাছে পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মাসুম হাসান বলেন, পাসপোর্ট পেতে প্রতিদিনই অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অথচ টাকা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেও তা নিতে আসছেন না অনেকে। বিষয়টি একেবারেই অন্যরকম। পড়ে থাকা পুরোনো পাসপোর্টগুলোর স্তূপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব পাসপোর্ট রাখতে অফিসে বাড়তি স্থানের প্রয়োজন হচ্ছে।
পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন পরও পাসপোর্ট নিতে না আসাদের একটি অংশ জরুরি ভিত্তিতে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে আবেদন করেছিলেন। আরেকটি অংশ আছে যারা বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। অনেক দেরিতে হলেও আবেদনকারীরা পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করে নিলে আমরা অনেক বেশি খুশি হবো।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত