নির্বাচনের আগেই কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা আর বাড়ছে
নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত প্রাধিকারের আওতা বাড়াতে চায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ তালিকায় রয়েছে কমিশনারদের আইএসডি সংযোগসহ ফ্যাক্স স্থাপন, টেলিফোনে আইএসডি সংযোগ এবং কমিশনারের ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানি তেলের পরিমাণ ২৫০ লিটার থেকে ৪০০ লিটারে উন্নীত করা। এছাড়া ইতোমধ্যে ৭৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল সেট ব্যবহারের সম্মতি মিলেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং নির্বাচন কমিশনাররা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিধান রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে পত্র জারির মাধ্যমে বিচারপতিদের নানান ধরনের সুবিধার সম্মতি দেয় সরকার। তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচন কমিশনারদের প্রাধিকারের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বুধবার বলেন, ‘আইনে বলা আছে বিচারপতিরা যেসব সুবিধা পাবেন, নির্বাচন কমিশনাররাও তেমনি সুবিধা পাবেন। কিন্তু এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনাররা কিছু সুবিধা পান না। আমরা সেগুলো নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্তির জন্য বলেছি।’
তিনি জানান, এসব সুবিধাদি নীতিমালার মধ্যে উল্লেখ না থাকলেও আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশন তা পাওয়ার কথা। তবে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য তারা বিষয়টি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তি চান।
জানা গেছে, একজন নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে আইএসডি সংযোগসহ ফ্যাক্স স্থাপন এবং বিদ্যমান টেলিফোনে আইএসডি সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে চাহিদা দিয়েছেন তারই একান্ত সচিব। কিন্তু প্রাধিকারে না থাকায় ওই সংযোগ দেওয়া হয়নি।
‘সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা, ২০১৮’-এ আইএসডি ফ্যাক্স স্থাপনের প্রাধিকারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রধান বিচারপতির কার্যালয়, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ের নাম উল্লেখ রয়েছে। আর টেলিফোনে আইএসডি সংযোগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও বাসভবন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, সব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপর্যায়ের ব্যক্তিদের নাম প্রাধিকারে রয়েছে।
এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাধিকার তালিকার বাইরে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত দপ্তরে আইএসডি সংযোগ এবং আইএসডি ফ্যাক্স স্থাপন করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রাধিকারে নির্বাচন কমিশনারদের নাম না থাকায় এসব সংযোগ দেওয়ার সম্মতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আরও জানা গেছে, বর্তমানে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার প্রত্যেকে দুটি করে গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে সিইসিকে বহনকারী বিএমডব্লিউ গাড়িটি সরকারি পরিবহণ পুলের। বাকি ৯টি গাড়ি ইসির।
দশটি গাড়িতে ১০ জন চালক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সরকারি পরিবহণ পুলের, পাঁচজন ইসির নিজস্ব ও চারজন ইসির একটি প্রকল্পের চালক। যদিও অর্গানোগ্রামে প্রত্যেক কমিশনারের জন্য একজন করে গাড়ির চালক থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া সরকারি প্রাধিকারে বরাদ্দকৃত গাড়ির জন্য প্রতিমাসে ২৫০ লিটার জ্বালানি বা ৩৫৮ ঘনমিটার সিএনজি বরাদ্দের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সম্প্রতি দুজন নির্বাচন কমিশনারের তেল বরাদ্দের ওই সীমা বাড়িয়ে ৪০০ লিটার করার জন্য সম্মতি চেয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এতে বলা হয়েছে, ওই দুজন কমিশনারের বাসা উত্তরায় অবস্থিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের যাতায়াতের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার ও শনিবারও তাদের অফিসে যাওয়া-আসা করতে হয়। এসব কারণে তাদের জন্য ৪০০ লিটার তেল বরাদ্দের জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া ৭৫ হাজার টাকার মূল্যমানের মোবাইল সেট ব্যবহারের প্রাধিকার তালিকায় নির্বাচন কমিশনারদের নাম ছিল না। ইসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি অর্থায়নে এ মোবাইল সেট ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছে। এই মোবাইল ফোন সেট ইসির টি. ও. অ্যান্ড. ইতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
যদিও বিচারপতিদের সমান সুবিধার যুক্তি দেখিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়াই কেএম নূরুল হুদার কমিশনের কমিশনাররা মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি ওইসব মোবাইল সেট ফেরত এনেছে ইসি সচিবালয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত