পরীক্ষার খবর নাই, তার আগেই শেষ সোয়া দুই কোটি টাকা
তীব্র জনবল সংকটে আছে সমাজসেবা অধিদফতর। সমাজকর্মীর শূন্যপদ পূরণে বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পরীক্ষার ঠিক আগমূহূর্তে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা গচ্চা গেছে বলে জানিয়েছে অধিদফতর সূত্র। জনবল স্বল্পতায় নিয়মিত কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে অধিদফতরের। এ নিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করতে দেশের দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, এতিম ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে এটি।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তিসহ সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এই অধিদফতর।
বর্তমানে দফতরটি ৫৪টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তৃণমূল পর্যায়ে ১ কোটি ৫ লাখ মানুষকে ভাতা দিয়ে আসছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে কাজ করে ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা। কিন্তু দীর্ঘদিন সমাজকর্মীর পদ শূন্য থাকায় এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কাজ বাড়লেও অধিদফতরের জনবল বাড়েনি সে হারে। রয়েছে শূন্য পদের বিড়ম্বনা।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী দফতরটির ১২ হাজার ৯৮৫টি পদ রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে ২ হাজার ৭০২টি পদ শূন্য। মাঠপর্যায়ে পদ ৩ হাজার ২০০টি, খালি আছে ৭৯৯টি।
জানা গেছে, এই শূন্যপদ পূরণে ২০১৮ সালের ১১ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তাতে আবেদন করেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ছিল ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এ জন্য ৬৩০টি পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পর সেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
পরে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষাটি নেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আগের দিন ২৩ ডিসেম্বর অনিবার্য কারণে দেখিয়ে তা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য ৩৭৩টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। দুবারই সারা দেশে থেকে ৬ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসে কেন্দ্র থেকে ফিরে যান। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ প্রার্থীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষ। এই পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য এরইমধ্যে অধিদফতরের প্রায় দুই কোটি ২১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদফতর।
জনবল না থাকায় ভুক্তভোগী যারা
জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি ভাতাভোগী আছে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ। এ খাতে চলতি বছর বাজেটে ৭ হাজার ১০৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। চলতি অর্থবছরে ১৫০টি দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলাসহ ২৬৩টি উপজেলায় শতভাগ দরিদ্র বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নেও ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নিয়োগ ঝুলে থাকায় এ কাজ বাধার মুখে পড়েছে।
এর বাইরে চলতি অর্থবছরে তৃতীয় লিঙ্গের জীবনমান উন্নয়নে ২ হাজার ৬০০ জনকে ভাতা, এক হাজার ২২৫ জনকে শিক্ষা উপবৃত্তি এবং ৯৯০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ খাতে বরাদ্দ ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরকারি হিসাবে দেশে এখন ২৪ লাখ ৪০ হাজার ১৬৩ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এদের উন্নয়নের কর্মসূচিগুলোও ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়।
একইভাবে ভাসমান জনগোষ্ঠীর ৫ হাজার ৬৬ জনকে ভাতা, ৩ হাজার ৯৯৮ জনকে উপবৃত্তি ও ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৯ কোটি ২৩ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ৪৫ হাজার ২৫০ জনকে ভাতা, ২১ হাজার ৯০৩ জনকে উপবৃত্তি ও ২৪২০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের কর্মসূচির আওতায় ২১ হাজার ৪৪৯ জনের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার চা শ্রমিককে আর্থিক সহায়তার জন্য ২৫ কোটি টাকার এবং ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এসব কাজও বাস্তবায়ন করেন ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা।
এর বাইরেও রুরাল স্যোশাল সার্ভিস (আরএসএস) কার্যক্রম, দুস্থ-সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যত্ন-পরিচর্যা, সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ, বিনোদন ও অধিকার সুরক্ষায় কাজ করেন তারা। বর্তমানে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার, ৬টি ছোটমণি নিবাস, ৩টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, ১টি দিবাকালীন শিশু যত্নকেন্দ্র, ৩টি দুস্থ শিশুদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং তিন হাজার ৭১০টি ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানার কার্যক্রম বাস্তবায়নেও কাজ করেন ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা।
জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এখনও নতুন সিদ্ধান্ত হয়নি। ইউনিয়ন সমাজকর্মীর অনেক পদ শূন্য। যে কারণে আমাদের কাজে সমস্যা হচ্ছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবাদানে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত