পুরো রমজান প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণার আবেদন
কর্তৃপক্ষ যখন দায়বদ্ধতা বাড়াতে সচেতন কিন্তু দায়বদ্ধ হতে সচেতন নয়, তখন সেই ডিপার্টমেন্টে মান সম্মত উন্নতি কামনা করা কাগজে কলমে হতে পারে কিন্তু বাস্তবে নয়।
একজন প্রাথমিক শিক্ষকের যত সমস্যা দিনের পর লালিত হচ্ছে তাতে যেন কোন দায় নেই কর্তৃপক্ষের! করোনা কালীন মহামারীতে সকল দপ্তরে সবই চলমান থাকলেও কি যেন এক অদৃশ্য কারণে প্রাথমিক শিক্ষকের দপ্তরে নাই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মূল লক্ষ্য শিশুকে স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। অথচ বাস্তবে যা পরিলক্ষিত তা হলো শিক্ষককে বাধ্য করা কল্পনার পরিকল্পনাকে। কাগজে এগিয়ে উন্নয়নের শতকরা হার বাড়ানো গেলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
একাধিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হলো বিদ্যালয়ের সময়, বদলি ও ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে। সবকিছুই বদলে গেলেও বদলি নীতিমালায় কি কি বদলি হয়ে চলমান হবে জানি না। তবে ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে শিক্ষককে নিয়ে ছুটাছুটি করতে বাধ্য করিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, তা সত্যিই দুঃখজনক নয় কি?
মন্ত্রণালয়ের গেজেটেড ছুটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রুটিন চাপিয়ে দিয়ে বাতিল করা হলো শীতকালীন ছুটি।
ছুটি বাতিল হয় অথচ জানে না প্রধান কর্তৃপক্ষ, তবুও ছুটি বাতিল কার্যকর। স্কুল খুলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পৌঁছাতে না পৌঁছাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে রমজান মাসেও শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ছুটি বাতিল।
এমন ঘোষণা একজন শিক্ষকের কানে পৌঁছানোর পরে আন্তরিক হয়ে ক্লাসে ঢোকার আগেই আবারও বঞ্চনার ব্যাথা নিয়ে কাতর।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বসে বসে বেতন খাওয়া নিয়ে চলল শ্লোগান। তাতে কষ্ট হয়নি শিক্ষকের, কষ্ট পেয়েছে তখনই যখন কর্তৃপক্ষ এমন উক্তি করেছেন।
আসন্ন রমজান মাসে শিখন ঘাটতি এগিয়ে নেয়ার নামে রমজানের ২০ দিন পর্যন্ত শ্রেণি পাঠদান চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এতে শিখন ঘাটতি কতটা পূরণ হবে জানি না, তবে এমন সিদ্ধান্তের কথা প্রচারিত হওয়ার পর শিক্ষকদের আন্তরিকতার যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা অপূরণীয়।
রমজানে একজন কর্মচারীর অফিসিয়াল কর্ম পরিচালনা করা আর উভয়ে অর্থাৎ শিক্ষক শিক্ষার্থী সিয়াম থেকে ক্লাস পরিচালনা করা এক কথা নয়।
শিখন ঘাটতি পূরণে শিক্ষককে ক্লাসে ঢুকাতে পারলেও শিক্ষার্থীরা কতটা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত তাও ভেবে ছুটি নিয়ে ছোটাছুটি পরিকল্পনা করা উচিত।
বিগত বছরে রমজানের ছুটিতে ক্লাস পরিচালনা করায় কতটা সফলতা পেয়েছে তা শিক্ষকেরা জানলেও কর্তৃপক্ষ বুঝতে চায়না।
বর্তমান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শিশু শিক্ষার্থী ও মুসলমানদের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবাদতের গুরুত্ব বিবেচনা করে পুরো রমজান ঘোষণা করেন।
এমতাবস্থায় বিগত দুই বছরের ঘাটতি পূরণের কারণ দেখিয়ে বিশ দিনে পূরণের পরিকল্পনা কল্পনার জগতে বাস্তয়ন করা হলেও তা শুধু হিসেবের পাতায় ভরাট থাকবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকারের ছুটি না কমিয়ে শিক্ষকের আন্তরিকতার মনোবল দৃঢ় রাখতে ও পবিত্র ইদ-উল ফিতর এর পরে স্বতঃস্ফূর্ত মনোবল, মানসিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে ক্লাসে যেতে পুরো রমজান ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত বলবৎ রাখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি।
অনুরোধে –
টি এম জাকির হোসেন
সিনিয়র সহ সভাপতি
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ (আনিস-রবিউল)
ও
সদস্য
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত