পুলিশ অফিসারদের মেস যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে

| আপডেট :  ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:১১  | প্রকাশিত :  ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০৪

পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা কামাল মিয়া (ছদ্মনাম) থাকেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার আরএফ পুলিশ প্লাজার নবম তলায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি ইউনিটে কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা মেসটিতে গত তিন বছর ধরে আছেন। বউ-বাচ্চা গ্রামে থাকার কারণে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ভবনটিতে তিনি কম ভাড়ায় এতদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন।

ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে জানানো হয়, আগামী ৩১ তারিখের মধ্যে রুমটি তাকে ছেড়ে দিতে হবে। শুধু তিনি নন একই ঘোষণায় মেসটি ছাড়তে হচ্ছে উপ-পরিদর্শক (এসআই), সার্জেন্ট ও পরিদর্শক পদমর্যাদার প্রায় ৩৫ কর্মকর্তাকে। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে মেসটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হবে।

এদিকে হঠাৎ করে এমন ঘোষণায় বেশ বিপাকে পড়েন সেখানে বসবাসরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সবাই। তারা বলছেন, আরএফ প্লাজা আগে জেলা পুলিশের ক্লাব ছিল। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এটির আধুনিকায়ন করা হয়। ২০১৫ সালে এটির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন হয়। আরএফ পুলিশ প্লাজা নাম দিয়ে ভবনটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।

বর্তমানে এই ভবনের নবম তলা ছাড়া বাকি সব ফ্লোর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধুমাত্র নবম ফ্লোরে ৩৩টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষের মধ্যে কিছু এক বেডের এবং কিছু ডাবল বেডের। আবার কিছু কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) এবং কিছু সাধারণ কক্ষ আছে। বর্তমানে মেসে নন-এসি এক বেডের ভাড়া প্রথম সাতদিন দৈনিক ১০০ টাকা করে এবং এরপর থেকে ১২৫ টাকা করে। আবার নন-এসি ডাবল বেডের ভাড়া প্রথম সাতদিন দৈনিক ২০০ টাকা এবং এরপর থেকে ২৫০ টাকা করে। এসি এক বেড প্রথম সাতদিন দৈনিক ৪০০ টাকা এবং পরে ৪৫০ টাকা করে।

এসব কক্ষে সিএমপিতে কর্মরত উপ-পরিদর্শক থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার ৩৫ জনের মতো কর্মকর্তা থাকেন। যদিও এক সময় মেসটিতে সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও থাকতেন। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকায় তাদের জন্য নির্ধারিত একটি ভবনে থাকেন।

এছাড়াও চট্টগ্রামে এক সময় কর্মরত ছিলেন এবং বিভিন্ন মামলার তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাদের আদালতে সাক্ষী দিতে আসতে হয়। সাক্ষী দেওয়ার সময় দুয়েক দিনের জন্য তারা মেসটিতে থাকতেন। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া হয়ে যাওয়ায় আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মেসটিতে কর্মকর্তারা ওই সুবিধা পাবেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের কল্যাণে এই ট্রাস্ট। ট্রাস্টের বিল্ডিং থেকে আমাদের নামিয়ে দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এটা কতটুকু যুক্তিসম্মত? গত ৯ তারিখ মেস ছেড়ে দেওয়ার আদেশ পাওয়ার পর এখনও আমি সুবিধামতো একটি বাসা পাইনি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। তখন মেস ভাড়া দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। অথচ আমাদেরকে এখন রীতিমতো তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরাতো এখানে ন্যূনতম ভাড়া দেই। স্যারদের কাছে অনুরোধ, প্রয়োজনে ভাড়া একটু বাড়িয়ে নিয়ে হলেও আমাদেরকে মেসে থাকার সুযোগ দিন।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরএফ পুলিশ প্লাজার নবম তলাটি ‘রোজ গার্ডেন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিও করেছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ফ্লোরটি বরাদ্দ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা সোমবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছি। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবো।’

সিএমপির সদর ডিসি আমীর জাফর বলেন, ‘আরএফ প্লাজা ভবনটির মালিক পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। তাদের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মেসে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। তাদের জন্য চকবাজার থানা এলাকায় একটি নতুন মেস করা হবে।’

জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যে তাদের জন্য চকবাজারে আরও ভালো মানের একটি ভবন দেওয়া হবে। আরএফ প্লাজায় টয়লেটের একটু সমস্যা ছিল। চকবাজারের ভবনে আশা করি সেই সমস্যা থাকবে না। এছাড়া নতুন ভবনে ওঠা পর্যন্ত যদি কারও অসুবিধা হয়, তবে আগের এখানে থাকার ব্যবস্থা থাকবে।’

সূত্র: জাগোনিউজ২৪

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত