পেটের দায়ে শিক্ষক কিংবা ঘটনাচক্রে শিক্ষক
আসলে বিষয় অনেকাংশেই সত্যি। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা ও অবহেলাই মূলতঃ এর পিছনে দায়ী। এই সেক্টরে জব করতে আসে দুই শ্রেণীর লোক।
১. পেটের দায়ে শিক্ষক: অন্য কোথাও জব না পেয়ে জুতার শুকতলি ক্ষয় করার পরে এখানে জব করতে আসে অনেকেই। কারণ জেনেশুনে কেউই এই অযাচিত “মোড়লগিরি” দেখতে ও সহ্য করতে আসতে চায় না। কিন্তু পেটের দায়ে ঠিকই এখানে এসে দাঁতে দাঁত চেপে থাকতে বাধ্য হয়। এই পেটের দায়ে শিক্ষক বনে যাওয়া মানুষ গুলো হয়ে উঠে “মাস্টার”, এই মাস্টার শব্দ টা শুনতে যতটা সম্মানের কিন্তু অর্থের এবং সামাজিক মর্যাদায় তার চেয়ে বেশি অপমানের, অবহেলার।
২. এক্সপেরিমেন্টের জন্য চাকরি: সদ্য লেখাপড়া শেষ করে পরীক্ষামূলক চাকরির পরীক্ষা দিয়েও অনেকেই শিক্ষক হয় এখানে। কিন্তু তারা সবসময়ই চেষ্টা করতে থাকে কিভাবে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ এখানে না আছে সম্মান, না আসে অর্থ। উপরন্তু বন্ধু ও পরিচিতমহলে এই চাকরির কথা গোপন রাখতে হয়, কারণ প্রাইমারি মাস্টার শুনলে অনেকেই অবহেলায় তাকায় এবং ওয়াজ নসিহতও করে যে এই সেক্টর থেকে বেটার অপশনে যাওয়ার জন্য।
ঠিক একইভাবে এই সেক্টরের কর্তাবাবুদের বেলায় ঘটনাচক্র সমীকরণ প্রযোজ্য। অন্যান্য সেক্টরের কর্তাবাবুরা অনেক স্মার্ট এবং এক্টিভ। তারা তাদের অধিনস্ত-বান্ধব অফিসার। কিন্তু এই প্রাইমারি তে যারা কর্তার আসন পায় আসলে তারাও এখানে আসতে চায় না কিন্তু ঘটনাচক্রে আসতেই হয়। আর আরো উপরের মহল সেইসব লোককে এখানে পাঠায় যারা অন্য সেক্টরে ক্ষমতার সিটে বসার জন্য ফিট নয়।
যদি তাই না হবে তাহলে প্রাইমারি শিক্ষা এবং শিক্ষকদের এই দুরাবস্থা কেন??? নিচের দিকের হুজুররা সবসময়ই শিক্ষকদের উপর আলগা মোড়লগিরি করে কিন্তু শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা কিংবা শিক্ষা অফিসগুলো তে শিক্ষকদের হয়রানির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
বরং পারলে তারাও পদে পদে হয়রানি করার সুযোগ খুঁজে এবং সহযোগিতা করে। এর জন্য অবশ্য প্রধান শিক্ষকরা বহুলাংশে দায়ী। কারণ তারা বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা নয়ছয় করার জন্য চরণ চাটতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারা ভুলেই গেছে যে তারা একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, তাদের উপর অন্যায় বা অযাচিত হস্তক্ষেপ প্রকারান্তরে অপমান। তারা সবকিছু তে জি হুজুর, জি হুজুর বলা শিখে গেছে। এই প্রধানরা কখনো সহকারীদের সুযোগ সুবিধার দাবি তে একাত্মতা প্রকাশ করে না, উল্টো বিরোধিতা করে।
আরো সবচেয়ে সমস্যা হলো- কয়েক লক্ষের এই শিক্ষকরা কখনো একসাথে হতে পারে না, কোন দাবি আদায়ে তারা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে বহুদলে বিভক্ত হয়, একজন আক্রান্ত হলে পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে পাশ কাটিয়ে সরে যায়। এই ফেসবুকে লেখার জন্য কোন ধরণের হয়রানির শিকার হলেও আমার বা আপনার পাশেও কেউ দাঁড়াবে না। কিন্তু এর বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য ভোগ করতে কেউই পিছপা হবে না।
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান (ফেসবুক থেকে নেওয়া)
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত