প্রাথমিকের এক সহকারী শিক্ষিকার শত কোটি টাকার সম্পদ
কুষ্টিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকার শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের উৎস খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে তার স্বামী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য।
এই ব্যক্তি হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। তার লেনদেনের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যাংক থেকে তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শেষে মামলা করবে দুদক।
গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি আতার স্ত্রী ৪ নম্বর পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান করে দুদক। এখন দুজনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে মামলা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাকারিয়া।
দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালুমহাল ব্যবসা, হাটবাজার ইজারা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভীন তার স্বামীর রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে শতকোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন শাম্মী আরা পারভীন ও তার স্বামী আতাউর রহমান আতা। উপজেলা চেয়ারম্যান আতা বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ দাঁড় করিয়েছে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বা অপ্রদর্শিত কোনো সম্পদ আমার নেই। দুদক মামলা করলে আমি তা মোকাবিলা করব।’
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি ঢাকায় দুদক সদর দপ্তরে জমা পড়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থাটি অনুসন্ধান করে জানতে পারে শাম্মী আরা পারভীনের বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ প্রায় অর্ধশত কোটি নগদ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া দামি জমি, ভবন ও মার্কেটসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তার। সব মিলিয়ে এসব সম্পত্তির মূল্য শতকোটি টাকার বেশি। একজন স্কুল শিক্ষিকার ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকার উৎসের সন্ধান শুরু করে দুদক। তার ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সূত্রে আতাউর রহমান আতার নাম আসে। এরপর দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাকারিয়াকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তিনি গত ৩০ মার্চ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও ব্যাংকে চিঠি দিয়ে আতার লেনদেনের তথ্য চান। গত বুধবার এপ্রিল এসব তথ্য পান। এখন এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুন্সি মো. মনিরুজ্জামান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান মন্ডল, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌলী মো. ইসতিয়াক ইকবাল হিমেলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা দুদকের চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, দুদকের চিঠি অনুযায়ী কেবলমাত্র মেসার্স আতাউর রহমান নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমানের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, আতাউর রহমান আতার অন্য নামে আরও অন্তত ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বামী-স্ত্রীর দুজনের সম্পদের হিসাব বিবরণী তলব করে ইতিমধ্যে দুদক নোটিস দিয়েছে। গত বুধবার হিসাব জমা দেওয়ার কথা থাকলেও দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন না। আজ-কালের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়া হতে পারে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়কালে কেবলমাত্র জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আয় করেছেন প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আতার বাড়ি ভেড়ামাড়া উপজেলার ষোল দাগ গ্রামে। ২০১২ সালে তিনি কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরের একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন। এরপর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ দল থেকে বহিষ্কার হলে আতা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হন তিনি।
অভিযোগ আছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন। এছাড়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান আতা। সে সময় তার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় স্ত্রী ও নিজের স্থাবর অস্থাবর-সম্পত্তির বিবরণে যথাক্রমে ১৫ লাখ ও ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকার ব্যাংক হিসাব এবং সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। হলফনামায় বলেছেন, তিনি সরকারি কোনো লাভজনক উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নন।সূত্র: দেশ রূপান্তর
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত