প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিংয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে নির্দেশনা জারি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিস্কুট বিতরণ তথা ‘দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প’ মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ব্যয় বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) পরিকল্পনা কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (৩য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২য় বার বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএমইডি’র শর্ত পালন সাপেক্ষে নির্দেশক্রমে বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীদের উচ্চ পুষ্টিমানের বিস্কুট বিতরণ করা হবে।
শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর মডেল নির্ধারণ এবং ব্যয় প্রাক্কলনের ফলাফল যাচাই করে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ণের কাজ বর্ধিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আইএমইডিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত দুই মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে সম্মতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, গত ১ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ অনুমোদন না দিয়ে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দেন। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় এবং বিস্কুট বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে যায়। নতুন প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এই সময়ে বিস্কুট বিতরণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অপুষ্টি ও ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হলে যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। কমিশন প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায়।
দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের দরিদ্রপীড়িত ১০৪টি উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে প্রকল্পের অধীনে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করা হয়। বিস্কুট থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৩৩৮ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়।
প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধন করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৫৪৫ কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
বিস্কুট বিতরণের সফলতা থেকে সারা দেশের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবার দিতে প্রণয়ন করা হয় জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা-২০১৯। নীতিমালা অনুযায়ী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’টি গত ১ জুন একনেকে উত্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবর খিচুড়ি দেওয়ার প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী ডিপিপি সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশে সফর রাখায় একনেক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয় সরকারকে।
দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ প্রকল্পটির অনুমোদনে বিলম্বের কারণে ব্যয় না বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। মহামারির মধ্যেও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট বিতরণ করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত