বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নির্দেশনা
করোনা পরিস্থিতির পরে আমদানি বাড়ছে। সামনে হজ মৌসুম। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। আর এ সুযোগে লাগামহীনভাবে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। খোলাবাজার থেকে শুরু করে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে বেড়েছে ডলারের দাম।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ খুব বেশি কাজে আসছে না। ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো দাম নিয়ে ঋণপত্র (এলসি) খুলছে। ব্যাংকগুলোর অনিয়ম বিষয়ে তদারকিতে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আগামী জুন ও জুলাই মাসে কোরবানির ঈদের আগে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে। রপ্তানিও বেড়েছে ও বাড়ছে। এতে কিছু দিনের মধ্যেই ডলারের বাজার একটা ভারসাম্যের মধ্যে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরো বলেন, এখন চাহিদার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে, তাদের বিষয়টি তদারকি করা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের দাম ১০০ টাকার ওপরে উঠে গিয়েছিল। তবে গতকাল বুধবার তা ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দাম আরো কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কার্ব মার্কেটে বর্তমানে কত ডলার আছে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক ধারণা দিতে পারেনি। অথচ এ বিষয়ে হিসাব থাকার কথা। ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে যে রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করার কথা সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানিয়েছেন। উদাহরণ হিসাবে তারা বলছেন, কোনো ব্যাংক থেকে কোনো ডলার না কিনেও তার পাসপোর্টে ইচ্ছামতো পরিমাণ লিখে এনডোর্স করতে পারেন।
তবে এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোতে প্রচুর ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্য এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে, যা আন্তঃব্যাংক লেনদেন নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঘোষিত দাম অনুযায়ী ডলার কেনা বেচার কথা। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে না। বর্তমানে ডলারের বাড়তি চাহিদার সুযোগে যেসব ব্যাংকের কাছে বেশি ডলার আছে তারা বাড়তি দাম আদায় করছে। ব্যাংকগুলোতেও বেচাকেনা হচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৬ টাকায়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক লেনদেনের এ মুদ্রাটির দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা বেঁধে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এলসির (ঋণপত্র) জন্য যে রেট দেয় তার চেয়ে বেশি ঘোষণার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে ঘোষণার চেয়ে অনেক বেশি দামে এলসি খুলতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমানভাবে সব ব্যাংককে ডলার পাচ্ছে না। ফলে বাজার থেকে বাড়তি দামে ডলার কিনে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, গ্রাহক ধরে রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এটি করতে হচ্ছে।
ডলার বাজার পরিস্থিতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যদি গত দুই বছরের ডলারের বাজার বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখব করোনা মহামারির সময়ও আমাদের বাজার স্থিতিশীল ছিল। কারণ ঐ সময় আমাদের আমদানি চাপ কম ছিল। আবার যেসব আমদানি হয়েছে তার অনেক পেমেন্ট বকেয়া ছিল। যা এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, খাদ্যদ্রব্য ছাড়া বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়ে তা নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্হিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা তাদের রয়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত