বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ শূন্য পদে আসছে নতুন মুখ
অব্যাহতি, বহিস্কার, মৃত্যু, দলত্যাগসহ নানা কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় ৭০টি পদ দীর্ঘদিন শূন্য। কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব পদ পূরণ করা হয়। কিন্তু নানা বাস্তবতায় সহসা কাউন্সিল হচ্ছে না। এ জন্য চেয়ারপারসন কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতাবলে পদগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তাভাবনা করছে হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে অংশ না নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছে বিএনপি। আগে থেকেই ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ দলটি আন্দোলন করছে। এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন জোরালো এবং তাতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ জনশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যই দ্রুত শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। ভয়াবহ বন্যায় থমকে যাওয়া সিলেট অঞ্চলে ঈদুল আজহার পরে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হবে বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতারা জানান, গঠনতন্ত্রে তিন বছর অন্তর জাতীয় কাউন্সিলের বিধান থাকলেও ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সর্বশেষ কাউন্সিল করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ তিন বছর আগেই পার হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে দলের অনেক নেতার মৃত্যু, অনেকে বয়সের বাস্তবতায় নিষ্ফ্ক্রিয়, স্বেচ্ছায় অবসর, অব্যাহতি; আবার অনেকে দলত্যাগ করেছেন। গত কাউন্সিলের পর শূন্য রাখা হলেও পরে অনেক পদ পূরণ হয়নি। সব মিলিয়ে সত্তরের বেশি পদ এখন ফাঁকা। এর মধ্যে ৪৯ নেতা মারা গেছেন, পদত্যাগ করেছেন ১২ জন, বহিস্কার হয়েছেন তিনজন ও অব্যাহতি পেয়েছেন আটজন। এসব পদ পূরণে উদ্যোগী হয়েছে দলের হাইকমান্ড।
বিএনপির ১৯ সদস্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচটি পদ শূন্য। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ারের মৃত্যু এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান অবসর নেওয়ায় পদগুলো শূন্য। অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এই ছয়টি পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের।
বিএনপির ৩৭ ভাইস চেয়ারম্যানের ১১টি পদই ফাঁকা। দু’জনকে স্থায়ী কমিটিতে পদায়ন, ছয়জনের মৃত্যু, একজন বহিস্কার ও দু’জন পদত্যাগ করায় পদগুলো শূন্য। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করে দেশের বাইরে। আর ইনাম আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির উপদেষ্টা পদে যোগ দেওয়ায় তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছে। এসব পদে যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরীসহ কয়েকটি নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। সাত সদস্যের যুগ্ম মহাসচিব পদ ফাঁকা না থাকলেও পদায়নের শূন্যতা পূরণে দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে দেখা যেতে পারে।
অর্ধশতাধিক সম্পাদকীয় ও নির্বাহী সদস্যপদ পূরণেও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এর মধ্যে মিজানুর রহমান সিনহা পদত্যাগ করায় কোষাধ্যক্ষ, সানাউল্লাহ মিয়ার মৃত্যুতে আইনবিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও প্রযুক্তিতে এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে পদায়নে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্পাদক পদ খালি রয়েছে। এসব ছাড়াও গবেষণা, যুববিষয়ক, ছাত্রবিষয়ক, আন্তর্জাতিক, ধর্মবিষয়ক, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক এবং অর্থনৈতিকবিষয়ক, সাংস্কৃতিকবিষয়ক, গ্রামবিষয়ক, ছাত্রবিষয়ক, স্বাস্থ্যবিষয়ক, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদকের পদগুলো সাবেক ছাত্র ও যুব নেতাদের দিয়ে দ্রুত পূরণের পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে ফেরা সংস্কারপন্থিদেরও বিভিন্ন পদে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতৃবৃন্দের মৃত্যুতে বেশিরভাগ পদ শূন্য রয়েছে। বেশ কিছু পদে এরই মধ্যে নতুনদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। সময়ের সঙ্গে অন্যান্য পদেও পদায়ন হবে। কাজটি কাউন্সিল ছাড়াও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করতে পারবেন।
সাবজেক্ট কমিটি: চলমান প্রক্রিয়ায় ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের বড় অংশের পদায়ন সম্ভব নয় বলে ফের আলোচনায় এসেছে সাবজেক্ট কমিটি। অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, অ্যাথনিক মাইনরিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কমিটিতে তাঁদের জায়গা দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে ছাত্রদলের বহিস্কৃত প্রভাবশালী ১২ নেতাকে ফেরানোর বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সাংগঠনিক ইউনিট: বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির মধ্যে মাত্র ছয়টি জেলার কাউন্সিল হয়েছে। ঈদের পর ঢাকাসহ বাকি জেলায় কাউন্সিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কাউন্সিলে প্রস্তুত নয় এমন জেলা কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। সবার আগে স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিক দলের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত