বিভিন্ন জেলায় নাপা-এইসের সংকট, কর্তৃপক্ষ বলছে অন্যকিছু
জাকির হোসেন, ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের হিসাবরক্ষক। চাকরির খাতিরে ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি। তবে ঈদের আগে ও পরে দুবার পরিচিতজনদের মাধ্যমে পাবনায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কিনে পাঠিয়েছেন। জাকির বলেন, ‘ঈদের দুদিন আগে বাবার জ্বর আসে। কিন্তু পাবনার কোথাও প্যারাসিটামল জাতীয় নাপা কিংবা এইস খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে ওষুধ কিনে পাঠাই। ঈদের পরও একবার নাপা কিনে পাঠাতে হয়েছে।’
কুমিল্লার বাসিন্দা ইমরান হোসেন জানান, তার এলাকা শাসনগাছায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। মূল শহর থেকে আগের চেয়ে পাতাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।
পাবনা, কুমিল্লা কিংবা ঠাকুরগাঁও নয়; দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ না পাওয়ার তথ্য মিলছে। কোথাও মিললেও পরিমাণে কম, দাম রাখা হচ্ছে বেশি। মূলত জ্বর, সর্দি, মাথা কিংবা শরীরের ব্যথা নিরসনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সারাদেশে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।
পাবনা, কুমিল্লা কিংবা ঠাকুরগাঁও নয়; দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ না পাওয়ার তথ্য মিলছে। কোথাও মিললেও পরিমাণে কম, দাম রাখা হচ্ছে বেশি। মূলত জ্বর, সর্দি, মাথা কিংবা শরীরের ব্যথা নিরসনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সারাদেশে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে
সংশ্লিষ্ট জেলার ওষুধ বিক্রেতারা জানান, প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা ও এইসের চাহিদা বেশি। চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। পাবনার দুবলিয়া বাজারের মৈত্র মেডিকেলের মালিক মতিলাল জানান, নাপার সংকট রয়েছে। কোম্পানি থেকে নাপা গ্রুপের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতাদের ওষুধ দিতে পারছেন না।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতালের সামনে অবস্থিত শুভ ফার্মেসি। তারা জানায়, জুলাই থেকে তারা বেক্সিমকোর নাপা ওষুধ পাচ্ছেন না। অথচ ক্রেতারা এসে নাপাই বেশি খোঁজ করছেন।
এ বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ড. মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, জ্বর হলেই শুধু নাপা খেতে হবে। অন্য কোম্পানির যে প্যারাসিটামল আছে, সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম। জ্বর হলেই চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খেতে বলেন। তাই বলে নাপাই খেতে হবে, এমন তো নয়।’
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, জ্বর হলেই শুধু নাপা খেতে হবে। অন্য কোম্পানির যে প্যারাসিটামল আছে, সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম। জ্বর হলেই চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খেতে বলেন। তাই বলে নাপাই খেতে হবে, এমন তো নয়
এদিকে, ঢাকার ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সেই অর্থে কোনো সংকট নেই। তাদের ভাষ্য, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ ওষুধ মজুত রাখার প্রবণতায় কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া অনেকে না জেনে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে প্রতি বেলায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করছেন। আবার সামান্য সর্দি বা ঠান্ডা লাগলেই প্যারাসিটামল খাচ্ছেন অনেকে।
লাজ ফার্মার জিএম আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘ঢাকায় একটু সংকট আছে। কিন্তু বেশি নয়। মাঝখানে নাপার একটু ঘাটতি ছিল। অনেক বেশি সংকট বা একেবারেই নেই— এমন তথ্য সত্য নয়। দেশে নাপাটা বেশি চলে। করোনার কারণে অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি কিনে রাখছেন। আমরা সমন্বয় করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ঢাকায় একটু সংকট আছে। কিন্তু বেশি নয়। মাঝখানে নাপার একটু ঘাটতি ছিল। অনেক বেশি সংকট বা একেবারেই নেই— এমন তথ্য সত্য নয়। দেশে নাপাটা বেশি চলে। করোনার কারণে অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি কিনে রাখছেন। আমরা সমন্বয় করে দেওয়ার চেষ্টা করছি
‘কেউ হয়তো ১০ পাতা নাপা চাচ্ছেন। তাদের আমরা তিন পাতা দিচ্ছি। কারণ, সবাই যেন পান। যে সংকট তৈরি হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে কেনার কারণে। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’
ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধের মধ্যে বেক্সিমকো কোম্পানির নাপা ও স্কয়ারের এইসের চাহিদা বেশি। এছাড়া তাদের তৈরি নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, এইস প্লাস ওষুধের বাইরে রিসেট, ফাস্ট, টামেন, রেনোভাসহ প্যারাসিটামল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ভালো মানের ওষুধ আছে। সেগুলোতে ঝুঁকছেন না ক্রেতারা।
রাজধানীর পান্থপথে লোপা মেডিকেল কর্নারে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন হুমায়ুন আহম্মেদ। তিনি জানান, হালকা জ্বরে ভুগছেন। দোকানে নাপা এক্সটেন্ড চেয়েছেন। না থাকায় অন্য দোকানে যাচ্ছেন। তার নাপা এক্সটেন্ডই লাগবে। ‘আরও তো ওষুধ আছে, কেন নাপা এক্সটেন্ড’— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাইরে, অন্যটা খেলে কাজে দেয় না।’
প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধের সংকট নিয়ে কোম্পানিগুলোর ভাষ্য, হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তা কেটে যাবে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঈদে তিন দিন ছুটি থাকায় বেক্সিমকোর উৎপাদন বন্ধ ছিল। আমাদের নাপাটা একটা ব্র্যান্ড। বেশি চলে। তিন দিন উৎপাদন বন্ধের কারণে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা জেলা শহরগুলোতে বর্তমানে আগের চেয়ে ৩০ ভাগ ওষুধ সাপ্লাই দিচ্ছি। চলতি সপ্তাহেই এ সংকট কেটে যাবে, এটা আর থাকবে না।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি সাইফুজ্জামান বলেন, ‘করোনার সেই অর্থে কোনো ওষুধ নাই। এটার জন্য চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধগুলো রেফার করেন। প্যারাসিটামল ওষুধের কোনো সংকট নাই, ঘাটতিও নাই। এটা মূলত মেডিসিনের দোকানদারদের কারসাজি। বলেন, পাওয়া যাচ্ছে না, কম আসছে। এ সুযোগে তারা বেশি দাম রাখেন।’
আমার জানা মতে স্কয়ার, বেক্সিমকো বা ইনসেপ্টার সাপ্লাই আছে। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি আরও বেশি দিন থাকে তবে এসব ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। ওষুধের সংকট নাই। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের দাম না কমে, তখন হয়তো সংকট হতে পারে
‘আমার জানা মতে স্কয়ার, বেক্সিমকো বা ইনসেপ্টার সাপ্লাই আছে। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি আরও বেশি দিন থাকে তবে এসব ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। ওষুধের সংকট নাই। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের দাম না কমে, তখন হয়তো সংকট হতে পারে। আপাতত কোনো সমস্যা নাই। আমার কাছে তথ্য আছে, সবার সাপ্লাই আছে।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত