বেতন দৈনিক ১৩০ টাকা, ৪৬০ কোটি টাকার মালিক তিনি
দৈনিক ১৩০ টাকা মজুরিতে টেকনাফ স্থল বন্দরে কাজ করা কর্মচারী এখন ৪৬০ কোটি টাকার মালিক। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকায় ছয়টি বাড়ি, ১৩টি প্লট এবং সাভার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অন্তত ৩৭টি প্লট। মাত্র ২০ বছর অবৈধ দালালি করে এই সম্পদ অর্জন করেছে সে। র্যাবের হাতে গ্রেফতার এই ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম (৪১)।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নুরুল ইসলাম ২০০১ সালে টেকনাফ স্থল বন্দরে ১৩০ টাকা দৈনিক মজুরিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতো। বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে। পরে সে বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালির সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়। একপর্যায়ে সে নিজেই তৈরি করে একটি দালালি সিন্ডিকেট। ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সে তারই আস্থাভাজন একজনকে ওই কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। তবে দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে সে। এভাবে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।”
গত সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬,৫০০ মিয়ানমার মুদ্রা, ৩ লাখ ৮০,০০০ টাকা, ইয়াবা ৪,৪০০ পিস, নগদ ২ লাখ ১,১৬০ টাকাসহ জাল টাকা জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নুরুল ইসলাম তার অপরাধ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
যেভাবে দালালি করতো
গ্রেফতারকৃত নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি বন্দরে পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথিমধ্যে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ হতে কাঠ, শুটকি মাছ, বরই আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেফতারকৃতের সাথে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের যোগসাজশ ছিল বলে সে জানায়। এছাড়া সে অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় এবং চতুরতার সাথে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করত।
অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে; তার মধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে সে ৬ টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জমি, প্লট, বাড়ি রয়েছে। নুরুলের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের মূল্য প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা। নামে-বেনামে মোট ১৯টি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে তার। বর্তমানে সে জাহাজ শিল্প ও ঢাকার সন্নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছে বলে জানা যায়।
দালালির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া টেকনাফ বন্দরে নিয়োগকৃত সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম (৪১)’কে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আটক করেছে র্যাব। তার কাছ থেকে জাল টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। নুরুল ইসলামের বাড়ি ভোলার ধুনিয়ার পশ্চিম কানাইনগর। গ্রেফতার নুরুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত