বেপরোয়া ঈদ উদযাপন: হাত-পা ভেঙে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ৭৩২
রাজধানীর কালাচাঁদপুরের দুই বন্ধু রিয়াদ ও অনিক। ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে ঘুরতে বের হন মোটরসাইকেল নিয়ে। রেডিসন হোটেল থেকে মিরপুর যাওয়ার পথে কালশি এলাকায় বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারায়। দুই বন্ধু ছিটকে পড়েন দুদিকে। হেলমেট থাকায় প্রাণে বাঁচলেও আঘাত গুরুতর। আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনিক। তার বাম পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।
অনিকের বোন জামাই মোহাম্মদ লালন বলেন, ঈদের দিন বাইক নিয়ে বের হয়েছিল। গাড়ির গতি অনেক বেশি ছিল। হেলমেট না থাকলে মারা যেত। বাইক চালানোর সময় সাবধানে চালাতে হবে।
অনিকের মতো সাত শতাধিক রোগী ঈদের তিন দিনে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অধিকাংশেরই আঘাত গুরুতর। বৃহস্পতিবার (৬ মে) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান- নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে, ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে বেপরোয়া বাইক, সিএনজি ও অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে মোট ৭৩২ জন হাত-পা ভেঙে ভর্তি হয়েছে। অনেকের অবস্থা ভয়াবহ। সাধারণত দৈনিক ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ জন রোগী ভর্তি হয়। অথচ ঈদের দিন ৩০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগের দিন ১৯৭ ও ঈদের পরের দিন ২৩৫ জন রোগী নিটোরে এসেছে হাত-পা ভেঙে। তাদের অনেকেরই হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
দোহার থেকে একজন এসেছেন ঝলসানো হাত নিয়ে। তিনি বাজি ফোটাতে গিয়ে তা হাতেই ফুটে যায়।
নিটোরের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স মিনা মারিয়া বলেন, অধিকাংশ রোগীই এখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও বাজি ফুটিয়ে হাত পোড়া। রোগীদের ৮০ শতাংশই সড়ক দুর্ঘটনার। এছাড়া ৫ শতাংশ বাজি ফুটানোয় হাত পুড়ে ও ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারেও রোগীদের ভিড় জমেছে। প্রয়োজন হলেও কাউকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া যাচ্ছে না। মূলত রোগীর চাপ ও কিছু ডাক্তার-নার্স ঈদের ছুটিতে থাকায় এই অবস্থা হয়েছে।
হাসপাতালে দেখা যায় জুয়েল নামে এক রোগীকে। এসেছেন ধামরাই থেকে। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে দুই পায়েরই হাড় ভেঙেছে তার।
সিরাজগঞ্জ থেকে দুই পা ও এক হাত ভেঙে নিটোরে এসেছেন শামীম হোসেন। বয়স প্রায় ২০ বছর। ঈদের দিন বান্ধবিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি।
হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল ছাড়াও সিএনজি ও অটোরিকশায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। সে তুলনায় বাস ও ট্রাকের দুর্ঘটনা কম।
দায়িত্বরত ব্রাদার মনোরঞ্জন দাশ বলেন, অনেক রোগী আপনারা দেখছেন। এদের অধিকাংশই বাইক দুর্ঘটনার রোগী। বেপরোয়া গাড়ি চালায়। কারো দুই পা শেষ, দুই হাত শেষ। সবাই তরুণ। দেখে কষ্ট লাগে। তাদের জীবন বেপরোয়া বাইকে শেষ হচ্ছে। লং ড্রাইভে যাচ্ছে বেপরোয়াভাবে। এটা নিয়ন্ত্রণের সময় এসেছে।
ওই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মাহবুব চৌধুরী বলেন, বাইক দুর্ঘটনা বেশি। প্রকৃত চালক ছুটিতে বাড়ি গেছে। ফলে অনিয়মিত চালক ড্রাইভ করেছে। ফাঁকা সড়ক পেয়ে অনেকে বেপরোয়া ড্রাউভ করছে। ঈদ আনন্দের পাশাপাশি সচেতনতা দরকার। নিয়ম কানুন মেনে সড়কে ড্রাইভ করা দরকার। অনেক তরুণের পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। নিজেদেরই অনেক কষ্ট লাগে। তাই বলবো, সবাই সাবধান হয়ে বাইকের গতি ঠিক করি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত