বড় অঙ্কের এলসিতে কঠোর তদারকি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে বহুমুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি বড় অঙ্কের এলসিতে কঠোর তদারকি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে তারা ৫০ লাখ ডলার ও এর বেশি অঙ্কের যে কোনো এলসি ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে অনলাইনে তদারকি করছে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্যের বড় অঙ্কের কোনো এলসি খোলা হলেই তার কারণ জানতে চাচ্ছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার প্রভিশন ছাড়া বড় অঙ্কের কোনো এলসি খোলার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ও রপ্তানি আয় সেভাবে না বাড়ায় এবং একই সঙ্গে রেমিট্যান্স কমার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলার প্রবাহ কমে গেছে। যে কারণে এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। এতে করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সব মিলে প্রবল চাপে পড়েছে রিজার্ভ। মূলত রিজার্ভের সাশ্রয় করতে ও নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে বেশিরভাগ এলসিই খোলা হচ্ছে ৫০ লাখ ডলারের বেশি অঙ্কের। এর কম অঙ্কের ছোট ছোট এলসি খোলা হচ্ছে কম। কেননা, এলসি কমিশন ও অন্যান্য চার্জ মিলে বড় অঙ্কের এলসি খুললেই খরচ কম পড়ে। ছোট অঙ্কের এলসি খুললেও খরচ বড় অঙ্কের এলসির সমানই। এ কারণে গ্রাহকরা বড় অঙ্কের এলসিই বেশি খুলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। একই সঙ্গে এলসি খোলার ক্ষেত্রেও তদারকি আরোপ করে। এতেও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এখন এ খাতে তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনলাইনে একটি ড্যাশ বোর্ডের (বিশেষ সফটওয়্যার) বড় অঙ্কের ঋণগুলো আগে থেকেই তদারকি করে আসছে। কিন্তু আগে ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক থাকায় এলসিতে এত কড়াকড়ি করা হয়নি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে এক্ষেত্রে বেশি তদারকি আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন বড় অঙ্কের ঋণের মতো করে বড় অঙ্কের এলসিতেও ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের কোনো এলসি খুললে সে তথ্য সঙ্গে সঙ্গে ড্যাশ বোর্ডে দিতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পেয়ে সব ব্যাংকের বড় অঙ্কের এলসি খোলার গতিবিধি মনিটর করতে পারে। ফলে কোন ব্যাংকে কেমন ডলারের চাহিদা থাকতে পারে তা আগে থেকেই অবগত থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার চাপ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় এখন আমদানি ব্যয় বেশি মাত্রায় বেড়েছে। এ কারণে তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে আসবে। কেননা বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলো এখন বিশেষ করে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে পারছে। আগে যেটা পারত না। এই ঋণ নিলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। এছাড়া রপ্তানিকারকরা আগে বেশি দাম পাওয়ার জন্য ডলার ধরে রাখত। এখন সেটি কমানো হয়েছে। এতে ডলারের সরবরাহ বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশি ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় খোলা হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হিসাবেও তদারকি করছে। বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর কাজে নিয়োজিত এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলার ধরে রাখত। সেটি যাতে না করতে পারে সেজন্য প্রবাসীরা যেদিন ডলার এক্সচেঞ্জ হাউজে জমা করবে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে বলে নির্দেশ জারি করেছে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ছে।
সূত্র জানায়, এসব ব্যবস্থার পাশাপাশি এখন থেকে যে কোনো অঙ্কের এলসি খোলার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলেছে। অর্থাৎ এখন থেকে সব ধরনের এলসির তথ্য আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। এভাবেও বাজারে ডলারের চাহিদা সম্পর্কে আগাম তথ্য নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর বাইরে আবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো বিলাসী বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খুলতে ডলারের জোগান না দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন ব্যাংকগুলো ওইসব খাতে কোনো ডলারের জোগান দিচ্ছে না। এতে এসব খাতের এলসি খোলাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কিন্তু এতেও আমদানি ব্যয় ও এলসি খোলা কমছে না। বরং বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক মে মাসের এলসি খোলা ও আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর আগে জুলাই-এপ্রিলে এলসি খোলা ও আমদানির ব্যয় বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছিল। জুলাই-এপ্রিলে এলসি খোলা বেড়েছিল ৪০ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৪৪ শতাংশ। মে মাসে এলসি খোলা ও আমদানি ব্যয় দুটোই বেড়েছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত