ভিপি নুরের সমর্থকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
সিলেটের কানাইঘাটে গণঅধিকার পরিষদের পথসভায় হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বেশ কয়েকজন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বুধবার (১ জুন) বিকেল ৫টার দিকে কানাইঘাট পৌরশহরে এ ঘটনা ঘটে।
গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে এবং তাদের নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক সিনিয়র নেতা, বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ বিষয়ে কানাইঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিলীপ কান্ত নাথ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এসময় উভয়পক্ষের কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা থানায় আসেন। মুচলেকার মাধ্যমে থানাপুলিশের হেফাজতে আনাদের রাত ৯টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের দুজনের মাথা ফাটা দেখেছি। তবে ওখানে কীভাবে বা কারা মাথা ফাটিয়েছে আমরা দেখিনি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণঅধিকার পরিষদের ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী নিয়ে প্রথমবারের মতো বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের নেতাকর্মীদের ত্রাণ বিতরণের সময় বাধা প্রদান ও হামলার প্রতিবাদে কানাইঘাট বাজারে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি কানাইঘাট পৌরশহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উত্তর কানাইঘাট বাজারের আন-নূর টাওয়ারের সামনে এসে থামে। পরে সেখানে এক পথসভা শুরু করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
পথসভা শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরুল হক নূর’র দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পাশের একটি বিল্ডিংয়ের পার্কিংয়ে ঢুকিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং মারফিট করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি শান্ত করে।
সিলেট জেলা ছাত্র গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি রাহাত নেওয়াজ চৌধুরী জানান, কয়েকদিন ধরে কানাইঘাটের বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার (৩১ মে) সুরইঘাট এলাকায় তাদের এক কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কর্মী মারধর করে ফেসবুকে তার কানধরে ওঠবসের ছবি ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ কানাইঘাট বাজারে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন।
তিনি বলেন, মিছিল শেষে উত্তর বাজারে শান্তিপূর্ণ পথসভা চলাকালে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে আমাদের ৫/৬ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেন। তাদের মধ্যে ছাব্বির আহমদ নামে একজনকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে কানাইঘাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা শামীম আহমদ শাহীন বলেন, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। এসব শুনে স্থানীয় ছাত্রলীগের কিছু কর্মী তাদের ধাওয়া দেন। হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেকিম শামীম ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রোমান আহমদ নোমান জানিয়েছেন, গণঅধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতাকর্মী বাজারে তাদের পথসভা থেকে সরকারবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে চরম কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
তারা বলেন, এসময় সাধারণ জনতা তাদের প্রতিহত করে তাড়িয়ে দিলে তারা আন-নূর টাওয়ারে আশ্রয় নেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমাদের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা জনতার হাত থেকে তাদের বাঁচাতে পুলিশের হাতে দেন।
থানা থেকে যাদের ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের মধ্যে গণঅধিকার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সিলেট জেলা ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি রাহাত নেওয়াজ চৌধুরী, সিলেট জেলা যুবঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব জুবায়ের আহমদ তোফায়েলসহ গণঅধিকার পরিষদ, যুবঅধিকার পরিষদ ও ছাত্রঅধিকার পরিষদের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত