মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জরুরী নির্দেশনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। কেউ বলে বি-বাড়িয়া কেউ বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। অনেকেই মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের সংক্ষিপ্ত রূপ বি-বাড়িয়া। আবার কিছু মানুষ ধর্মীয় কারণে ব্রাহ্মণ শব্দটির উচ্চারণ বর্জন করে বি-বাড়িয়া নামটাকে প্রাধান্য দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দাপ্তরিক কাজে বি-বাড়িয়া না লিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া লেখার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার, সকল জেলা প্রশাসক এবং সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদের চিঠিতে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সুচনালগ্ন তেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিসেবে পরিচিত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালের এক এসআরও এর মাধ্যমে এই জেলার নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। একটি মহল কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে বি-বাড়িয়া জেলা নামে প্রচার করার ফলে বিভিন্ন দাপ্তরিক যোগাযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, মহাসড়কে স্থাপিত ওভারহেড ডিরেকশন সাইনবোর্ড, কিলোমিটার পোস্ট ও বিলবোর্ডগুলোতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামে পরিবর্তে বি-বাড়িয়া নামের প্রচলন শুরু হয়, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং তাদের আওতাধীন দপ্তরসমূহের চিঠিপত্র এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সরকারি সফরসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাম বি-বাড়িয়া লিখে পত্র যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারিভাবে বি-বাড়িয়া নামে কোন জেলা নেই।
এমতাবস্থায় সকল দাপ্তরিক কাজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে বি-বাড়িয়ার পরিবর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া লিখার জন্য এবং তার আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাকে এই বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশের যে কোন জেলার মানুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অথবা বি-বাড়িয়া উভয় নামে চিনে এই জেলাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ সম্পর্কে এস এম শাহনূর প্রণীত “নামকরণের ইতিকথা” বই থেকে জানা যায়, সেন বংশের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতার সৃষ্টি হতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ি তৈরি করেন। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
অন্যদিকে অপর মতানুসারে দিল্লী হতে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এই শহর থেকে বসবাসরত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন, পরবর্তীতে এই থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিকৃত নাম ‘বি-বাড়িয়া’ বহুল প্রচলিত। যার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং দুই নামের কারণে অন্যান্য জেলার মানুষ বিভ্রান্তি হচ্ছে বলে অনেকই মনে করেন। এই অবস্থার সমাধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত