মহাসমাবেশের আগেই সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে বসতে চান প্রতিমন্ত্রী
সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা বেতন ও নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠনসহ ৭ দফা দাবিতে আগামী ৩ জুন ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কথা রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের। গত ২২ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবী বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরাম।
তবে মহাসমাবেশের আগেই কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
আগামী বৃহস্পতিবার (২ জুন) কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩০ মে) বিকেলে মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও সাক্ষাতের কথা রয়েছে কর্মচারী নেতাদের।
রোববার (২৯ মে) প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কর্মচারী দাবী বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরামের আহবায়ক হেদায়েত হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলীসহ কর্মচারী নেত্রীবৃন্দ।
সাক্ষাতে কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দাবির বিষয়ে সরকারের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মচারীদের কথা বলতে হবে। এখানে এতোদিন একটা গ্যাপ ছিলো, আজকের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে যথাযথ জায়গায় প্রস্তাবনাটা পেশ করলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দাবিগুলো পূরণ হবে। আমাদের উদ্দেশ্যটা খুব ভালো, তবে উদ্দেশ্য পূরণ করার পদ্ধতি কোনটা, আমরা কী এগ্রেসিভ (আক্রমনাত্মক) ওয়েতে যাবো নাকি আমরা আলোচনা মধ্যেদিয়ে দাবি আদায় করে নেব।এসময় উপস্থিত কর্মচারী নেতারা বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণ চাই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে চাই শান্তি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই জিনিসগুলো করা।আগামী যাতে আপনাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ হয়, যাতে করে একটা ভালো কিছু করতে পারি আগামীতে, সেজন্য পথটা আজকে তৈরি করলাম। আগামী ২ জুন আমরা একসাথে বসবো, সেখানে সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিবসহ আরও যারা রয়েছেন তাদের রাখার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, ‘আপনারা তো ভোটের রাজনীতি করছেন না, কোনো অসৎ উদ্দেশ থাকলে সেটা তো সরকার বিরোধী বিষয়। সরকার সবসময় চেষ্টা করছে কিভাবে আপনাদের ভালো রাখতে পারে, দেশটাকে কিভাবে ভালো করতে পারে। সেজন্যই এতো আইন করা, বাজেটের আকার বাড়ানো। সবই কিন্তু আমাদের জন্য, মানুষের জন্য। সেক্ষেত্রে আমাদের সুন্দর আলোচনা করার সুযোগ রয়ে গেছে। কেন উল্টা পথে হেঁটে নিজেকে প্রমাণ করবো সরকারের প্রতি আমার গোসসা-রাগ, আমি বিরোধী পক্ষ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলছি উল্টা পথে না হেঁটে যে পথে হাঁটলে দাবিগুলো আদায় করতে পারবেন সেই পথে থাকেন। আমরা আপনাদেরকে সব সহযোগীতা করবো।আমরা আপনাদের সাথে আছি।’
কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো:
১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৭৩ সনের জাতীয় বেতন স্কেলের অনুরূপ ১০ (দশ) ধাপ বিশিষ্ট বেতন স্কেল নির্ধারণ-পূর্বক ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ব্যয় বিবেচনায় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা করতে হবে এবং এ উপলক্ষ্যে নৰ্ম জাতীয় পে-কমিশন গঠন করতে হবে। নবম পে-স্কেল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদেরকে ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে, শতভাগ পেনশন প্রদান, স্বেচ্ছায় অবসরে চাকরির বয়সসীমা ২০ বছর নির্ধারণ এবং আনুতোষিক প্রতি ১ টাকায় তিনশত টাকা নির্ধারণ করতে হবে এবং পে-কমিশনে কর্মচারীর প্রতিনিধি রাখতে হবে।
২. সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরে সকল দপ্তর/অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের পদবী ও গ্রেড পরিবর্তনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরকে প্রথম শ্রেণী ও সহকারী শিক্ষকদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণী কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
৩. ব্লক পদ প্রথা প্রত্যাহার, পদোন্নতিযোগ্য পদ শূণ্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর উচ্চতর পদের বেতন স্কেল প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকে যৌক্তিকভাবে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে এবং আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে।
৪. ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫% এর পরিবর্তে ২০% এ উন্নীত করেতে হবে। টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড, টেকনিক্যাল কর্মচারীদের জন্য দুটি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল। এলাকা ভেদে ৭০% হতে ১০০% হারে বাড়িভাড়া ভাতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা প্রদান করতে হবে।
৫. ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদেরকে বিনাসুদে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা গৃহঋণ সুবিধা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।
৬. উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি শুরু থেকে গণনা, অযাচিত ২০% হারে পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য সকল নিয়োগে ৩০% পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অফিসার্স ক্লাব, বিএমএ, কেআইবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মতো চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য রাজধানীতে একটি কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে।
৭. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর এবং অধঃস্তন
আদালতে কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত