মহাসড়কে যানজট নেই বললেই চলে

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত দুটি ফ্লাইওভার সোমবার খুলে দেওয়ার পর থেকে কোথাও যানজট নেই বললেই চলে। এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী পরিবহন চালক ও যাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
তাদের আশা, নতুন পথ উন্মুক্ত হওয়ায় এবার ঈদে জয়দেবপুরের ভোগরা বাইপাস থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত যানজট হবে না। তবে দুই ফ্লাইওভারের দুই প্রান্তে বালু আর পাথর দিয়ে কাজ করায় বৃষ্টি হলে সড়ক পিচ্ছিল হবে, যা গাড়ি চলাচলে ধীরগতি তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে নলকা সেতুর দক্ষিণের লেনটি খোলায়ও মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জয়দেবপুর বাইপাসের নাওজোড় এলাকায় ফ্লাইওভারে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে গাড়ির চাপ নেই। কিছু অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল করছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, কাভার্ডভ্যান, মালভর্তি ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ বেশিরভাগ যানবাহন ফ্লাইওভার দিয়ে ঢাকার দিকে এবং বিপরীতগামী টাঙ্গাইলের দিকে যাচ্ছে। এটি খুলে দেওয়ার আগে জয়দেবপুর চৌরাস্তাগামী শত শত যানবাহন দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে থাকত। আবার চন্দ্রাগামী পরিবহন এ যানজটে আটকা পড়ে চরম ভোগান্তি হতো।
এলাকাবাসী ও পরিবহন চালকরা জানান, এই দুটি ফ্লাইওভার ঈদের আগে খুলে না দিলে যানজটে পড়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশ জানায়, দুই ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় জয়দেবপুরের চৌরাস্তা ও বাইপাস সড়ক মোড় থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সড়কটিতে ঈদের সময়েও তেমন যানজট দেখা যাবে না বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
নাওজোড় ফ্লাইওভারের মালভর্তি পিকআপভ্যানের চালক আল আমিন জানান, এখন স্বস্তিতে গাড়ি চালাতে পারছেন। তাদের এখন অন্তত আধাঘণ্টা বাঁচবে।
কাভার্ডভ্যান চালক জেনারুল ইসলাম জানান, আগে কারখানার মালপত্র নিয়ে ঢাকা যেতে এই ফ্লাইওভারের নিচসহ কয়েকটি পয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবলে পড়ে থাকতে হতো। এখন সহজে এবং যানজটমুক্তভাবে দ্রুত যাওয়া যাচ্ছে।
দুপুর দেড়টার দিকে এ মহাসড়কের সফিপুর ফ্লাইওভারের পশ্চিশ পাশে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন চালকের সঙ্গে। তবে বেশিরভাগই জানান, এখন এক মিনিটের জন্যও যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে না। বেশিরভাগ যানবাহন ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করছে।
বাসচালক সাগর মিয়া জানান, এই মহাসড়কে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার আর হতে হবে না।
সালনা কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে প্রায় যানজট লাগত। সফিপুর ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় গতকাল দুপুরের পর থেকে কোনো যানজট নেই।
নলকা সেতু ঘিরে প্রত্যাশা অনেক
সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সওজের নতুন নলকা সেতুটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা উত্তরের যাত্রীদের। ফুলজোড় নদীর ওপর আশির দশকে নির্মিত পুরাতন সেতুর পাশেই তড়িঘড়ি চালু করা হলো নতুন নলকা সেতুর দক্ষিণ লেনটি। ঢাকা থেকে দক্ষিণ-উত্তরবঙ্গের ২২ জেলার মানুষের ঈদ-পূর্ব চলাচলে সেতুটির একটি লেন চালু করে সওজ। দক্ষিণ লেন দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাস উত্তরের দিকে চলবে। পাশের পুরাতনটি দিয়ে চলবে ঢাকামুখী বাস-ট্রাক।
লেনটি চালু হওয়ায় পুরাতনটির ওপর চাপ কমেছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সালেকুজ্জামান খান ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি লুৎফর রহমান। সাসেক প্রকল্পের পিডি ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, পুরাতন সেতুটি দুই লেনের এবং নতুন ছেড়ে দেওয়া লেনটি দিয়েও দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারবে। তারপরও ঈদের সময় একমুখীতেই চলবে।
সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও জেনিন কাউন্টার বাস সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মেজবাহুল ইসলাম লিটন বলেন, নলকা সেতুর কারণে ঘন ঘন যানজট ও ধীরগতির কারণে ঢাকা ও উত্তরের শত শত বাস জেলা শহর দিয়ে ঘুরে যেত, সেটা এখন অনেকটা কমবে। পাশাপাশি উত্তরের যাত্রীরাও বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচবেন বলে আশা করছি।
বিবিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ আহসান বাপ্পী বলেন, নতুন সেতুর পূর্বদিকে নলকার মোড়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা এবং ঈদের সময় লক্কড়ঝক্কড় বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে যাত্রী প্রত্যাশা পূরণ করাটা সম্ভব হবে না।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, লক্কড়ঝক্কড় বাস ঢাকার যেখান থেকে ছাড়বে, সেখানেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নলকা সেতুসহ জেলার মহাসড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা রোধে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরা মাঠে থাকবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত