মাইলেজ পদ্ধতির প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে কর্মবিরতি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ। প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ। এছাড়াও আন্ডার রেস্টে কাজ করার কারণে যাত্রা বাতিল হয়েছে অনেক ট্রেনের।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের দাবি, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। ১৬০ বছর ধরে চলা মাইলেজ পদ্ধতিতে পূর্বের ন্যায় সকল সুবিধাদি বহাল রাখতে হবে। অন্যথায় ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রেল স্টেশন প্লাটফর্মে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) কাজ করেননি রানিং স্টাফরা। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে বিরাজ করছে হ য ব র ল অবস্থা।
জানা গেছে, মাইলেজ রীতি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে সংকট নিরসনে বৈঠকের আহ্বান জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। আগে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তারপর তারা বৈঠকে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
রেলের গার্ড, টিটি ও ট্রেন চালকরা ট্রেন নিয়ে প্রতি ১০০ মাইল দূরত্বের জন্য একদিনের মূল বেতন পান। নয় হাজার টাকা মূল বেতনের একজন ট্রেন চালক ১০০ মাইল অতিক্রম করে মাইলেজ পান ৩০০ টাকা। তারা ৮ ঘন্টা ডিউটি করার পরও রেলওয়ের প্রয়োজনে অতিরিক্ত দায়িত্বে ট্রেন নিয়ে গন্তব্যে ছুটে চলেন। ৮ ঘন্টা ডিউটি করার পর তারা অনেক সময় বিশ্রামেরও সুযোগ পান না। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন রানিং স্টাফরা। তাই তারা মাইলেজ ভাতা পান। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সেটি বাতিল করা হয়েছে। গত ১২ মাস রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়ে আসছেন তারা। মন্ত্রী থেকে জিএম পর্যন্ত সবাই কথা দিয়েছিলেন তাদের এ সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। তাই কর্মবিরতিতে যাওয়ার প্রশ্নে এখন অনড় অবস্থানে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের নেতারা।
রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী, ট্রেন চালক, সহ-চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এজন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ, ওই পদে নিয়োগ বিধিমালাতে সেটাই বলা আছে এবং সেই নিয়ম অনুযায়ী শত বছর ধরে তারা সেই হিসেবে বেতনও পেয়ে আসছেন। মাইলেজের হিসেব হলো, প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। ৮ ঘণ্টায় একদিনের কর্মদিন ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই-তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেইভাবেই দেওয়া হয়। এছাড়া মূল বেতনের হিসেবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় তার সাথে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধিকার আদায়ে আমরা আন্দোলন করছি। আমরা চাই সুন্দর সমাধান। আগের নিয়ম বহাল রাখতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপনে সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে সেটি প্রত্যাহার করতে হবে। এ নিয়ে আমরা মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ১২ মাস ধরে আলোচনা চালালেও কোনও সুরাহা হয়নি। এখন শ্রমিকরা বেতন না পেলে কাজ করবে না। ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে’।
এদিকে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) চাঁদপুর থেকে বিশেষ ট্রেনে ফেরার পথে লাকসাম স্টেশনে তিনজন কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২০ মিনিট পর আশ্বাস পেয়ে কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসময় রানিং কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে তিনজন কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। মাইলেজ জটিলতার কারণে ক্রু সংকটে পড়তে হচ্ছে। এতে ট্রেন চালাতে সমস্যা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. আনসার আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি করছেন না রানিং স্টাফরা। যে কারণে আমরা এলএম ও গার্ড সংকটে ভুগছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি শাটল ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছি। অর্থ মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সেটি শ্রমিকবিরোধী। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই। নতুন নিয়মে মাইলেজ বা কাজ যতই করি না কেন এক বেসিকের বেশি টাকা পাবো না। টাকা না পেলে কেউ কাজ করবে না। গার্ড, টিটি ও এলএমরা মাইলেজ সুবিধা নিয়েই অবসরে যেতো। নতুন নিয়মে কোনও মাইলেজ সুবিধা পাবে না। তাই আমরা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করবো না। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মাইলেজ সুবিধার ঘোষণা না এলে আমরা ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে যাবো।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত