মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নিয়ে থানায় স্ত্রী
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ধানমন্ডি থানায় এসে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিডি করেন তিনি। এর আগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান ডা. জাহানারা এহসান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ৯৯৯ এ ফোন করেন মুরাদের স্ত্রী। পুলিশের কনস্টেবল সমমর্যাদার একজন অপারেটর ফোন ধরেন।
মুরাদের স্ত্রী তাকে বলেন, ‘আমি ডা. জাহানারা। ধানমন্ডি থেকে বলছি। আমার স্বামী ডা. মুরাদ, এমপি মুরাদ।’
এসময় ‘আপনাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি’ জানতে চাইলে মুরাদের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী কয়েকদিন ধরেই আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। কথায় কথায় আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার আমি। আমাকে বাঁচান। ও বলেছে আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে ও আমার সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। আমার ওপর এখন হাত তুলতে চেয়েছিল। আমাকে আপনারা বাঁচান। আমাকে উদ্ধার করুন। প্লিজ পুলিশ পাঠান, এখনি পুলিশ পাঠান।
৯৯৯ থেকে কল পেয়ে পরে ১৫ নম্বর সড়কের ওই বাসায় পুলিশ পাঠানো হয়।
লিখিত অভিযোগে ডা. জাহানারা এহসান বলেন, বিবাদী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে বিগত ১৯ বছর যাবত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। বিবাহিত জীবনে আমাদের সংসারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। বিবাদী আমার স্বামী। তিনি বর্তমানে সরকারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কারণে-অকারণে আমাকে এবং আমার সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ৩টার দিকে পূর্বের ন্যায় আমাকে ও সন্তানদের গালিগালাজ করে মারধর করতে গেলে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহায়তা চাই। ধানমন্ডি থানা পুলিশ বাসার ঠিকানায় পৌঁছালে বিবাদী বাসা হইতে বাহির হইয়া যায়। আমি এমতাবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বিবাদী আমাকে এবং আমার সন্তানদের যেকোনো সময় ক্ষতিসাধন করিতে পারে।
সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এ ছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ার পর আর উপায় না পেয়ে দেশে ফিরে আসেন বিতর্কিত এ রাজনীতিক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত