লঘুদণ্ড-তিরস্কার-বেতন হ্রাসেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা
দেশের বিভিন্ন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর হরহামেশা প্রকাশ পায়। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও অনেক সময় জড়িয়ে যান এসব অপরাধে। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারের জন্য রয়েছে বিশেষ বিধিমালা। প্রথমে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে আসে শাস্তির প্রসঙ্গ। বিগত কয়েক বছর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। ঘটেছে বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেকের ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল বড়। প্রমাণিতও হয়েছে। তবে দেখা গেছে শাস্তি হিসেবে পেয়েছেন লঘুদণ্ড। অনেকের গুরুদণ্ড কমিয়ে দায়মুক্তিও দেওয়া হয়েছে। এভাবে বারবার লঘুদণ্ড বা শুধু ‘তিরস্কার’ পেয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলন, দায়িত্বে অবহেলা, প্রতারণা, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতিসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে। বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, অপরাধ তদন্তে নিয়োগ দেওয়া হয় কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেওয়া হয় শাস্তি। দেখা যাচ্ছে, বড় অপরাধ প্রমাণিত হলেও শাস্তি মোটামুটি বেতন স্কেলের নিম্নতর ধাপে নামিয়ে দেওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, তিরস্কার, পদাবনতি- এসব লঘুদণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী।
বিধিমালায় রাখা গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। তবে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়াকে গুরুদণ্ড মনে করেন না জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। বিধিমালায় অসদাচরণ ও দুর্নীতির জন্য শাস্তি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। যে কোনো শাস্তি দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগের অপব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসন ব্যাপকভাবে রাজনীতিকীকরণের কারণে অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দলীয় অনুগত কর্মকর্তারা বড় অপরাধ করলেও লঘু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে প্রশাসনে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হবে না। বরং তা অপরাধ করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের আরও উৎসাহিত করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়। অনেক সময় অভিযুক্তের চাকরিকাল, বয়স, মানবিক দিক বিবেচনা করেও শাস্তি নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া যে কারও শাস্তি মওকুফ বা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির।
আলোচিত অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনার ক্ষেত্রে দুদক পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। আর ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত কিছু থাকলে সেটায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যখন ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং (বিভাগীয় ব্যবস্থা) শুরু হয়, তখন তার অপরাধটা কী, তা বিভিন্ন শুনানির মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি। বিভিন্ন কমিটি স্পটেও যায়। এগুলো থেকে একজন যখন দোষী সাব্যস্ত হয়, তার গ্র্যাভিটি অব ক্রাইম বা ইরেগুলারিটিস যেটা আসে, সেটা অনুযায়ী গুরু বা লঘু শাস্তি দেওয়ার দুটি বিধান আছে—সেটি দেওয়া হয়।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, একজন কর্মকর্তা তার ওপর ন্যস্ত রাষ্ট্রের সেবামূলক দায়িত্ব পালন করেন। একটা জায়গায় হয়তো কোনোভাবে ভুল করে ফেলেন। সেই ভুলটা কেমন হয়েছে, সেটার ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বিষয়টি আমিও লক্ষ্য করেছি। অনেক বড় অপরাধ করেও লঘুদণ্ড হয়েছে। শাস্তি বলতে পদোন্নতি দুই বছর বন্ধ থাকা বা বেতন কিছুটা কমিয়ে দেওয়া; এগুলো তো শাস্তি হলো না।
অনেক বড় অপরাধ করেও লঘুদণ্ড হয়েছে। শাস্তি বলতে পদোন্নতি দুই বছর বন্ধ থাকা বা বেতন কিছুটা কমিয়ে দেওয়া; এগুলো তো শাস্তি হলো না।
সাবেক মহা-হিসাবরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, আমাদের দেশে তো অপরাধের সঠিক শাস্তি হয় না বলে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি না হওয়াটা একটা বড় সমস্যা। প্রশাসন তো এখন অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে রাজনীতিকীকরণ। প্রশাসনে রাজনীতিকীকরণের কারণে দুর্নীতি আরও বেড়ে গেছে। শাস্তিও তো সেভাবে হয় না। কোনো শাস্তির প্রস্তাব এলে তদবির আসে- তাই সামান্য শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে আমরা এটাই দেখছি।
সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান জাগো নিউজকে বলেন, যখন কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তখন একটি প্রাথমিক তদন্ত হয়। যখন প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যায় অভিযোগের কিছুটা হলেও সত্যতা আছে, তখন সার্ভিস রুলস অনুযায়ী তদন্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে থাকে তিনি কোনো অপরাধ করেছেন কি না? সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার বিবেচনায় যে শাস্তি আসবে, সেটাই মূলত শাস্তি।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসির বিরুদ্ধে যা যা শুনেছি সে অনুযায়ী তার বড় কোনো শাস্তি হলেই সাধারণ মানুষ হিসেবে খুশি হতাম। তদন্ত কর্মকর্তা বা যিনি বিচারের দায়িত্বে আছেন তার তো খুশি বা বেজার হওয়ার বিষয় নেই।
আবু আলম আরও বলেন, আমাদের তদন্ত কিংবা আইনে কোনো দুর্বলতা আছে। আবার আমরা যে মিডিয়া ট্রায়াল করছি সেটা সঠিক নাও হতে পারে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিভাগীয় মামলায় দণ্ড দেওয়া হয় অভিযোগের মাত্রা বিবেচনায়। অনেক সময় শাস্তির মাত্রা নির্ভর করে তিনি কত কাছের লোক, কত দূরের লোক সেটার ওপর। অনেক সময় দেখা যায়, যার লঘুদণ্ড হওয়ার কথা তাকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়, আবার যাকে গুরুদণ্ড দেওয়ার কথা তাকে লঘুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। যিনি দণ্ড দেবেন তিনি বিচক্ষণতা ও ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিলে তো এটা হওয়ার কথা নয়।
সরকারি চাকরিজীবীদের অপরাধের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালাও বাধা মন্তব্য করে ফিরোজ মিয়া বলেন, এই বিধিমালায় দুর্নীতিগ্রস্তদের লঘুদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আগের বিধিমালা অনুযায়ী, দুর্নীতি প্রমাণ হলে কাউকে আর চাকরিতে রাখার সুযোগ ছিল না। আইন-কানুন যদি এভাবে থাকে তবে বিভাগীয় মামলায় শাস্তিও তো সেই অনুযায়ী হবে।
বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধের তুলনায় নগণ্য বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, বদলি করা হয়, তিরস্কার করা হয়, পদোন্নতি আটকানো হয়- এগুলো প্রমাণিত অভিযোগের তুলনায় নগণ্য।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার তথা দুর্নীতি জড়িত। তাই অন্য যে কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এটা যেমন দুর্নীতি দমন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত অপরাধ, এক্ষেত্রেও (সরকারি কর্মচারী) সেটা প্রযোজ্য হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আলোচিত অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনার ক্ষেত্রে দুদক পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত কিছু থাকলে সেটায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শুদ্ধাচার কৌশলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কতগুলো সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নির্ধারণ করা আছে, যেগুলো তাদের মানতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে কৌশলটি মানা হচ্ছে না। কারণ, এটি মানা হলে অনিয়ম-দুর্নীতি এই পর্যায়ে আসতো না।
‘অপরাধের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না করার বিষয়টি যদি অবারিতভাবে চলতে থাকে, সেটা দেশে সুশাসন ও দুর্নীতির প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে’- বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরি আইনে একটি বৈষম্য রয়েছে। সেটা হলো সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে দুদককে পূর্বানুমতি নিতে হবে। এটা অগ্রহণযোগ্য বিষয়, কেন তাদের ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম রাখা হবে। এটা পরিবর্তন করা উচিত।
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে আরিফুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিককে হয়রানিমূলকভাবে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন। ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও পরে ডিসি অফিসে নেওয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শো গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে।
আলোচিত এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পর ডিসি সুলতানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্ত বোর্ডের দাখিল করা প্রতিবেদনে সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে আনা ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
শাস্তির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনার পর সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে দুই বছরের জন্য তার বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ‘লঘুদণ্ড’ দেওয়া হয়।
পরে তিনি এই শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই লঘুদণ্ডও বাতিল করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
লঘুদণ্ড পান রিন্টু বিকাশ চাকমাও
সাংবাদিক আরিফুলকে নিগৃহীত করার ঘটনায় অভিযুক্ত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমাও লঘুদণ্ড পান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রজ্ঞাপনে জানায়, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার থাকার সময় রিন্টু বিকাশ চাকমা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার নানা কার্যক্রম অভিযান পরিচালনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। গৃহীত কার্যক্রম আইনসম্মত হয়নি বলেও প্রতীয়মান হয়।
তার বিরুদ্ধে করা বিভাগীয় মামলার তদন্তে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বা অন্য কোনো উপযুক্ত গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সরকারি কর্মকমিশনও (পিএসসি) এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে।
কিন্তু পরে রিন্টুকে গুরুদণ্ডের পরিবর্তে তিন বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড দেওয়া হয়।
বেতন কমানো হয় জামালপুরের ডিসি কবীরের
২০১৯ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় জামালপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় সরকার। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ওই বছরের ২৫ আগস্ট আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বিভাগীয় মামলা হয়।
নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন তিন বছরের জন্য নিম্নতম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে এই শাস্তি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
সরকারি বাসভবনের প্রতিবেশী অন্যান্য কর্মকর্তাকে হুমকি, মিথ্যা পরিচয়, খারাপ ব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল উপসচিব মো. লোকমান আহমেদের বিরুদ্ধে। একাধিকবার বিভাগীয় মামলার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১৫ এপ্রিল লোকমান আহমেদকে সাময়িক বরখাস্তও করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে লোকমানের বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের জবাব দিলে লোকমানকে লঘুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে ‘তিন বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’র লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যাহার করা হয় লোকমানের সাময়িক বরখাস্ত আদেশ।
উপসচিব নাজিয়া শিরিন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক থাকার সময় জেলার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে উত্তর খড়িবাড়ি মৌজায় তিস্তা নদীর বালুমহাল ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইজারাগ্রহীতার দাখিল করার চেক ব্যাংকে জমা না দিয়ে ইজারার পুরো টাকা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে ইজারাগ্রহীতার সঙ্গে চুক্তি করেন। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নাজিয়া শিরিনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদণ্ড দেওয়া হলো।
গত বছরের ১১ মে তিনি এই শাস্তি পান। তিনি পরে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব হন। নাজিয়া শিরিন এখন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
মো. মাহবুবুর রব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে টেলিফোন করে নিয়মিত অফিসে আসতে বলা হলেও তিনি আসেননি। পরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ অফিসে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও যোগদান করেননি। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর উপসচিব হিসেবে পদোন্নতির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ১০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়। তিনি যথাসময়ে যোগদান না করে ১৩ সেপ্টেম্বর একটি যোগদানপত্র আবেদন ই-মেইলের মাধ্যমে ১৬ সেপ্টেম্বর পাঠিয়ে কোনো প্রকার যোগাযোগ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। পরে তার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’র অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। মামলার শুনানিতে দাখিল করা কাগজপত্র, মামলা রেকর্ড পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। গত বছরের ১৮ অক্টোবর তাকে ‘তিরস্কার’ নামের লঘুদণ্ড দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
উপসচিব মাহবুবুর রব এখন পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় কারাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইফতেখারুল ইসলাম খান নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নাটোর সদর উপজেলার ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৬০০৪, ৬৯৪৩ ও ৮৫১৭ নম্বর দাগের ২৭ দশমিক ১৬৯৬ একর আয়তনের অর্ধবঙ্গেশ্বরী রানি ভবানী দিঘিটি (জয়কালী দিঘি) বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষের জন্য নাটোর আধুনিক মাছ চাষ প্রকল্প লিমিটেডকে বন্দোবস্ত দেন। বন্দোবস্ত দিতে বেআইনিভাবে সহযোগিতা করেন। এতে সরকারের এক কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৫১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, তাকে গুরুদণ্ড দিতে মামলায় পর্যাপ্ত ভিত্তি থাকায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার ইসলাম সরকারকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এরপর ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইফতেখারুল ইসলাম খানের এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতম ধাপে নামিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ইফতেখারুল ইসলাম খান যুগ্মসচিব হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে, বিসিকের পরিচালক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবসরেও গেছেন।
সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়া, স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা, ডিভোর্সের হুমকি দেওয়া ইত্যাদি। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় বলে মতামত দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আরিফুজ্জামান একজন ধূর্ত, হিংস্র ও জটিল প্রকৃতির মানুষ। তার আচরণ মার্জিত নয়, যাবতীয় সমস্যার জন্য তিনি দায়ী এবং তিনি বিষয়টি জটিল করে রেখেছেন। তার এমন কার্যকলাপ প্রশাসন ক্যাডারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে ও সরকারি অফিসের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে।
কিন্তু শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে তার প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষণ করা হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর আরিফুজ্জামানকে ‘তিরস্কার’ নামের লঘুদণ্ড দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দাম্পত্য কলহ গড়ালো রাস্তায়, লঘুদণ্ড দিয়েও পরে তা বাতিল
বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আফরোজা বেগম পারুল ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। ওই সময় তার স্বামী প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য মো. আব্দুল কুদ্দুস বোরহানউদ্দিন ইউএনও’র দায়িত্বে ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহের কারণে পারুল একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও ২০১৯ সালের ৬ মার্চ আব্দুল কুদ্দুসের কর্মস্থল বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের সামনে তার গাড়ি থামিয়ে অসদাচরণ করেন। সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও দাম্পত্য কলহের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য পন্থায় সমাধানের চেষ্টা না করে রাস্তায় জনসম্মুখে প্রকাশ করে প্রশাসন ক্যাডারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে মামলা হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী তার পদোন্নতি পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
তিনি পরে গত বছরের ১২ জানুয়ারি এই লঘুদণ্ডও মওকুফের জন্য পুনর্বিবেচনা আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি কমিয়ে ‘তিরস্কার’ করা হয়।
একইভাবে তার স্বামী সিনিয়র সহকারী আব্দুল কুদ্দুসকেও ‘পদোন্নতি পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত’ রাখার লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীসময়ে পুনর্বিবেচনার ভিত্তিতে তাও বাতিল করে ‘তিরস্কার’ করা হয়।
কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী কমিশনার থাকার সময় মো. আব্দুর রউফ তালুকদার (বর্তমানে একটি জেলা পরিষদের সচিব) তথ্য গোপন করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তামান্না রহিম ফাল্গুনী নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। স্ত্রী হিসেবে ফাল্গুনীকে প্রাপ্য আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে রউফের বিরুদ্ধে।
পরে বিভাগীয় মামলার ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড হতে পারে, তাই ২০১৯ সালের তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুনিমা হাফিজকে।
তদন্ত, সাক্ষ্যপ্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও গুরুদণ্ডের পরিবর্তে লঘুদণ্ডের সিদ্ধান্ত হয়। তার বেতন তিন বছরের জন্য নিম্নতম ধাপে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি এ শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। শেষে গত বছরের ২৪ মার্চ শাস্তি আরও কমিয়ে ‘তিরস্কার’ দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়ে বেতন কমে কর্মকর্তার
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালনকালে সহকারী পরিচালক মুনতাকিম মো. ইব্রাহীম (বর্তমান কর্মস্থল রাঙ্গামাটি) পাসপোর্ট ইস্যু সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করেছেন ও এখতিয়ারভুক্ত এলাকার বাইরে আবেদন গ্রহণ করেছেন। তিনি ইজি-০৮৬১৩৬৮ পাসপোর্ট ইস্যুর আগে ‘রেগুলার’ হিসেবে আবেদন এনরোলমেন্ট করে ডিসিএম (গ্রাহক ডেটা ম্যানেজমেন্ট) সংশোধন করে ‘জরুরি’ হিসেবে অনুমোদন দেন।
মুনতাকিম ওই পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পেমেন্ট ভেরিফিকেশন ও রোহিঙ্গা ডাটাবেজ যাচাই না করে অ্যাপ্রুভাল এবং ওইদিন পার্সোনালাইজেশন সেন্টার থেকে প্রিন্ট করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অফিসপ্রধান হিসেবে অধীনস্থ কর্মচারীদের অব্যাহত অনিয়ম তদারকিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন মুনতাকিম। বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে নামিয়ে দেওয়া হয়। সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে তাকে এ ‘লঘুদণ্ড’ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ২৩ ডিসেম্বর।
সিনিয়র জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) মো. শফিকুল ইসলাম খান ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত। গত বছরের ৬ মার্চ ভোরে হাজতি মো. ফরহাদ হোসেন রুবেল কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা করা হয়। সুরক্ষাসেবা বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি (শফিকুল ইসলাম) শুধু নিজের দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতার পরিচয় দেননি, বন্দি লাফিয়ে পালিয়ে গেছেন তা নিশ্চিত হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট বন্দি নিখোঁজ রয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে প্রতারণা করেছেন।
বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাকে শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী ‘লঘুদণ্ড’ দেয় সুরক্ষাসেবা বিভাগ। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শফিকুলকে শাস্তি ‘তিরস্কার’ দিয়ে সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে দুর্নীতি: ইউএনও’র পদাবনতি
গুচ্ছগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগে পদায়নের জন্য ন্যস্ত) মোহাম্মদ শফিকুর রহমানকে সম্প্রতি পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আত্মসাৎ করা ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুযায়ী ‘অদক্ষতা’, ‘অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণতা’র অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিভাগীয় মামলা হয়। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিধিমালা অনুযায়ী গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শফিকুর রহমানকে দুই বছরের জন্য নিম্নপদে অবনমিতকরণ অর্থাৎ সহকারী কমিশনার/সহকারী সচিব পদে নামিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র: জাগোনিউজ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত