শিক্ষকদের এমপিও ভোগান্তিতে নতুন মাত্রা
বেসরকারি কলেজের ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে ভোগান্তি নিয়ে নতুন করে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব শিক্ষকদের এমপিও নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন। এমনকি সরকারিভাবে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকরাও এমপিওভুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন।
অন্যদিকে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত না হয়ে সরাসরি এমপিওভুক্ত হওয়ায় এমপিও স্থগিত হয়েছে ১০ শিক্ষকের।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালায় বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত করা যাবে। সে কারণে যত ভোগান্তিই হোক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনা ছাড়া এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অধিভুক্ত কলেজগুলোয় কোনও বিষয়ের অনুমোদন নিতে হলে বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কলেজগুলো তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েই বিষয় অনুমোদন নেয়।
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ দুজন শিক্ষক নিয়োগ এবং এমপিওভুক্তির সুযোগ রয়েছে।
এই দুই নীতির মাঝখানে দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্তি সুযোগ পেলেও একজন শিক্ষক বঞ্চিত হন। এই বঞ্চিতরাই হচ্ছেন তৃতীয় শিক্ষক।
শিক্ষকরা বলছেন— শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা সংশোধন করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এরই মধ্যে দুই দফা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হলেও তৃতীয় শিক্ষকের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে বছরের পর বছর চলছে বৈষম্য।
বেসরকারি শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় দুই জন শিক্ষকের বেশি পদ না থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এমপিও বৈঠকে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে। অর্থাৎ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে যে কয়জনের এমপিওভুক্তির সুপারিশ করা হয় শুধু তাদের এমপিওভুক্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। অন্যরা আবার অপেক্ষা করতে থাকেন মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী বৈঠকের ওপর।
জানা গেছে, এনটিআরসিএ তৃতীয় বিজ্ঞপ্তিতে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ করেছে। ২০২২ সালে যেসব শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন তারা এমপিওবঞ্চিত হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে আবেদনও করেছেন। কিন্তু তৃতীয় শিক্ষক হওয়ার কারণে এসব শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। সরকারি দফতর নিয়োগের সুপারিশ করলেও নীতিমালা সংশোধন না করার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তৃতীয় বিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএ সুপারিশ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষক শারমিন নাহার এবং নাজমুল হোসেন তৃতীয় শিক্ষকদের পক্ষে গত ২৬ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে এমপিওভুক্তির দাবিতে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আমরা গত ২০ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনটিআরসিএ’র সুপারিশ পেয়ে দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে এমপিওভুক্ত শাখায় তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। কিন্তু এনটিআরসিএ সুপারিশ পাওয়ার পরও শতাধিক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারিনি।
অন্যদিকে, তৃতীয় শিক্ষকদের এ অবস্থা থেকে রেহাই দিতে দেশের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজের কলেজ গভর্নিং বডির সহায়তায় তৃতীয় শিক্ষকদের সরাসরি এমপিওভুক্তির আবেদন জানানো হয়।
শিক্ষকদের দাবি— সারাদেশে এভাবে অর্ধশতাধিক শিক্ষক ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলের ১০ জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। এমপিও স্থগিত হওয়া এসব শিক্ষকরা জানান, আমাদের মতো অনেকেই নিয়ম না মেনে সরাসরি এভাবে এমপিভুক্ত হয়েছেন। বছরের পর বছর অপেক্ষা করে যখন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে তখন এমপিওভুক্ত করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। অন্যথায় বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে থেকে বাঁচতে দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরির অনিশ্চয়তা দূর করতে তাড়াতাড়ি এমপিওভুক্ত হতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন শিক্ষকরা। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরাসরি এমপিওভুক্তির আবেদন করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। যারা ধরা পড়েনি তারা তো নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। শিক্ষকদের অনৈতিক পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে মন্ত্রণালয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত