শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে নতুন নির্দেশনা প্রকাশ
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কিছু সতর্কতা জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সেখানে প্রথমদিকে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রিতিষ্ঠানসমূহ খোলা রাখতে বলা হয়েছে, যেন খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক/কর্মচারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের সব ধরনের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এলাকায় কোভিড-১৯ পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কমিটি জানায়, সারাদেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এর পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রমণ হারে উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার থেকে অনেকটাই নেমে কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় এসেছে। যদিও সংক্রমণ এবং মৃত্যু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার উদ্দেশ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে প্রায় সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ মাস যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে সরকার অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের এবং হলের আসাসিক ১৮ ও তদুর্ধ্ব বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ১৮ ও তদুর্ধ্ব বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা সভায় উপস্থাপিত হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটির রোগতত্ত্ব-বিষয়ক কমিটি আমন্ত্রিত অতিথির সামনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরে। সবার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ গৃহীত হয়।
স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ কখন এবং কীভাবে পুনরায় চালু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো, সব শিক্ষার্থীর শিক্ষা, শিক্ষক/কর্মচারী ও সমাজের মঙ্গল এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে তাদের সব ধরনের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা করা; স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এলাকায় কোভিড-১৯ পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
সরকার যদি স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে—
ক. প্রি-স্কুল ব্যতীত সব স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় খুলে দেওয়া যেতে পারে।
খ. সব স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করা এবং ব্যত্যয় ঘটলে সে ব্যাপার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা (৫ বছরের কমবয়সী শিশু ব্যতীত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী)। কেন্দ্রীয়ভাবে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করা। একইসঙ্গে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপসমূহ—যেমন: হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া/হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করা) এবং সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।
গ. স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীর কোভিড-১৯ এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে এবং তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে।
ঘ. উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঙ. শ্রেণিকক্ষে এবং শিক্ষাপ্রিতিষ্ঠানসমূহে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস সপ্তাহের কোন দিন কোনটি হবে তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন: প্রথমদিকে আমরা পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া, বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক/দুই দিন খোলা রাখতে পারি। এতে করে একটি নির্দিষ্ট দিনে যেই ক্লাসটি খোলা থাকবে তার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এতে করে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হবে। অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।
চ. আবাসিক সুবিধা সংবলিত স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিম্নোক্ত পরামর্শসমূহ প্রযোজ্য (মাদ্রাসা সহ)-১. সব সমাবেশস্থানসমূহ (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা এবং রান্নাঘর থেকে রুমসমূহে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা।
২. একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
৩. মাদ্রাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা।
এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।
ছ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার আগে ‘করণীয়’ এবং ‘বর্জনীয়’ কাজ সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিবাবকসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীদের একটি অরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এই ওরিয়েন্টেশন সীমিত উপস্থিতি ও নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে সশরীরে আয়োজন করা যেতে পারে, তবে প্রয়োজনে অনলাইন সেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সংক্রান্ত তথ্য সংবলিত লিফলেট তৈরি, বিতরণ করা এবং ‘করনীয়’ ও ‘বর্জনীয়’ বিষয়গুলো মিডিয়া এবং স্থানীয় ক্যাবল লাইনের মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। যে সব শিক্ষার্থীর কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকবে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন/ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন/ আইসোলেশন থাকাকালীন তাদের শুশ্রুষার জন্য নির্দেশনা এই ওরিয়েন্টেশনে থাকতে হবে। যে সব শিক্ষার্থীর রোগের লক্ষণ পাওয়া যাবে অথবা তাদের পরিবারের কারও এ রকম লক্ষণ থাকবে অথবা কোভিড-১৯ রোগ পাওয়া যাবে তাদের অনুপস্থিত গণ্য না করে ১৪ দিন বড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) ও প্রচারণাপত্র প্রস্তুত করা দরকার।
জ. স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে।
নির্বচিত কিছু স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষা এবং সার্ভিল্যান্সের প্রোটোকল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সব জেলায় (আর টি পিসিআর) ল্যাব আছে সে সব জেলার স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সার্ভিল্যান্সের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
যে সব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি [শনাক্তের হার >২০% বা কেসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা (আগের সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে ৩০% বেশি সংখ্যক কেস)], সেই জেলাগুলোতে আরও নিবিড় সার্ভিল্যন্স থাকা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে।
ঝ. সব বিধিনিষেধ সুষ্ঠু পালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম গঠন করে দৈনিক মনিটরিং করতে হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত