সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিফট হওয়া উচিত যেসব কারণে

| আপডেট :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৫৬  | প্রকাশিত :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৫৬

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৬৫,৬২০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক সংখ্যা ৩,৫৬,৩৬৬ জন। এরমধ্যে ৩৪৩৪৬ জন শিক্ষক ডিপিএড প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন পিটিআইতে ডেপুটেশনরত। এই হিসাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড়ে ৫.৪৩ জন শিক্ষক আছেন অন্যদিকে ডিপিএড প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য পিটিআই তে কর্মরত শিক্ষকদের বাদ দিলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যার গড় ৪.৯০ জন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা ২,২৯,৯৩৬ জন এবং এই শিক্ষকদের একটি অংশ মাতৃত্ব জনিত কারণে ছুটি গ্রহণ করেন এবং কিছু শিক্ষক পিটিআই সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে কর্মরত। যেখানে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড় শিক্ষক সংখ্যা ৫.৪৩ জন সেখানে এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালুকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা মাথায় রাখলে সহজে অনুমান করা যায় দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা কেমন হতে পারে।

সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠদান, সমাবেশের সময়সীমা উল্লেখপূর্বক ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত তালিকায় ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৭৭৯ কর্মঘণ্টা ও দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৬২৭ কর্মঘণ্টা এবং ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে কর্মঘন্টা ১০৮৬ ঘন্টা ১৫ মিনিট ও দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে কর্মঘন্টা ১০৪১ ঘন্টা ৩০ মিনিট নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মঘন্টার হিসাবে মনে হয় দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে পরিশ্রম অনেক কম।

অনুমোদিত ছুটির তালিকায় এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের জন্য শনি- বুধবার পর্যন্ত সকাল ৯:০০ – ৩:১৫ ঘটিকা ও বৃহস্পতিবার ৯:০০-২:১৫ ঘটিকা পর্যন্ত এবং দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের জন্য শনি- বুধবার পর্যন্ত সকাল ৯:০০- ৪:০০ ঘটিকা ও বৃহস্পতিবার ৯:০০-২:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত সময়সূচি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। দুই শিফটে পরিচালিত প্রতিটি বিদ্যালয়েই ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান এক শিফটেই পরিচালিত হয় কিন্তু বিষয়টি অনুমোদিত ছুটির তালিকায় অগ্রাহ্যই থেকেছে। অথচ ছুটির তালিকায় হিসাবেই দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের কর্মরত একজন শিক্ষক এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়েরশিক্ষকের থেকে সপ্তাহে [(৪৫x৫+১৫) মিনিট = ২৪০ মিনিট] ৪ ঘন্টা অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।

একটি বিদ্যালয়কে দুই শিফট থেকে এক শিফটে রূপান্তর করা শুধু ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে না। এই রূপান্তর পক্রিয়ার জন্য এমন কিছু উপদান আবশ্যক যার যোগান দেয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক তো দূরের কথা প্রাথমিক শিক্ষার উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা দ্বারাও পূরণ কার্যত অসম্ভব। প্রতিটি শ্রেণিতে যদি একটি করেও শাখা থাকে তবে একটি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে এক শিফটে পাঠদান পরিচালনা করতে অফিস সহ কমপক্ষে ৭টি কক্ষ এবং ৬ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। অন্যদিকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালুকৃত বিদ্যালয়ে অফিসসহ কমপক্ষে ৯টি কক্ষ ৯ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। তাছাড়াও পর্যাপ্ত বেঞ্চ, ওয়াসরুমসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়ের উপস্থিতি আবশ্যক।

প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ের তুলনায় বছরে ১৫১ ঘন্টা ৩০ মিনিট বাড়তি শ্রম হিসাবের মারপ্যাঁচে কোথায় হারাল?

সম্পাদনায়: রাজেশ মজুমদার ও উজ্জ্বল প্রধান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত