সঞ্চয়পত্র নিয়ে নতুন করে যা জানা গেল
সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোয় সরকারের সুদ ব্যয়ে প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে সরকারের সুদ ব্যয় কমবে তিন হাজার কোটি টাকা। সুদহার কমানো এবং বিক্রিতে ভাটার কারণে এই অর্থ সাশ্রয় হতে পারে। এতে অর্থবছর শেষে এ খাতে সরকারের ব্যয় কমে ৩৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাদের জন্য সঞ্চয়পত্র, সরকার চাচ্ছে শুধু তারাই বিনিয়োগ করুক। এটি ধনী শ্রেণির বিনিয়োগের জন্য নয়। তাই ১৫ লাখ টাকার পর থেকে সুদহার কমানো হয়েছে। এতে সরকারের সুদ ব্যয় কিছুটা কমবে। তবে অর্থবছর শেষে কত কমবে তা নির্ভর করবে এর বিক্রির ওপর।’
সূত্র মতে, গত ২১ সেপ্টেম্বর সরকার সার্কুলার জারি করে ১৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনায় সুদহার কমিয়েছে। নতুন নিয়মে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদ পাওয়া যাবে ১০.৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে মুনাফা পাওয়া যাবে ১০ শতাংশ। এই সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যবে ৯ শতাংশ হারে।
পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১০.৭৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার হবে ৯.৭৫ শতাংশ। দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা পাওয়া যাবে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার সাড়ে ৯ শতাংশ হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে পরিবার সঞ্চয়পত্রে। এই সঞ্চয়পত্রই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। সুদও পাওয়া যায় ভালো। নতুন সুদহারের কারণে এর বিক্রি ৫-১০ শতাংশ কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগ রয়েছে, এ সঞ্চয়পত্রে সরকারি চাকরিজীবীসহ অনেক উচ্চমধ্যবিত্তও বিনিয়োগ করে। নতুন হারে তাদের বিনিয়োগে অনীহা বাড়বে। যদিও নতুন হার বেশির ভাগ ব্যাংকের সুদহারের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রেও ভালো প্রভাব পড়তে পারে। তবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এর মুনাফার হার কমানোর কারণে সরকারের ব্যয় কিছুটা কমতে পারে এ সঞ্চয়পত্রে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের নতুন হার কার্যকর হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় কম হওয়ার আশা করছে। মুনাফার হার কমার সঙ্গে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সম্পর্ক রয়েছে। তাই এ সিদ্ধান্তে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। এতে আরো এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। সব মিলিয়ে তিন হাজার কোটি টাকা সুদ ব্যয় কম হতে পারে।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকার ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। তবে এ খাতে সুদ পরিশোধের জন্য সরকার ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের আশা অনুযায়ী, তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমলে অর্থবছর শেষে সরকারকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা সুদ ব্যয় করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সাধারণ সঞ্চয়কারীদের কাছে যেটা বিনিয়োগ, সরকারের জন্য সেটা ঋণ। সঞ্চয়পত্র বিক্রির অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে। সরকার পরে তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত