সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় নিয়ে নতুন করে যা হচ্ছে
পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলো ১০টি সংগঠনের সম্বন্বয়ে গঠিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৩ মে) রংপুরে সমাবেশ শেষ হয়েছে। আগামী রোববার (১৫ মে) খুলনায় সমাবেশের কথা রয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দাবি আদায়ে আগামী ২৭ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের কথা রয়েছে।
তবে তার আগেই ফাটল ধরতে শুরু করেছে কর্মচারীদের ঐক্যে। রংপুর সমাবেশ ঘিরে কর্মচারীদের এ দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। দেখা গেছে, একই ব্যানারে আলাদাভাবে সমাবেশ করেছে আলাদা আলাদা গ্রুপ। এমন পরিস্থিতিতে ২৭ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের সম্ভাবনা এবং সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ জানিয়েছেন নিম্ন গ্রেডের সাধারণ কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোনোভাবেই দাবি আদায় সম্ভব হবে না।
৭ দফা দাবিতে শুক্রবার সকালে রংপুর টাউন হল অডিটরিয়ামে দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ করেছে একটি পক্ষ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম চাঁদ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে বিকেলে টাউন হল মাঠে একই ব্যানারে (দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ) সমাবেশ করে অন্য একটি পক্ষ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ মজিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা মো. আব্দুর রউফ সরকার। বিকেলের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও ১১-২০ গ্রেড সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান এবং অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
জানা গেছে, সমাবেশে প্রধান অতিথি কাকে করা হবে তা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ মো. মসিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রধান অতিথি করতে চেয়েছিলেন দাবি আদায় ঐক্য পরিষদদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলী। তবে তাতে বাদ সাধে ১১-২০ ফোরাম।
রোববার (১৫ মে) খুলনা বিভাগীয় সমাবেশেও সমন্বয়হীনতার আভাস পাওয়া গেছে নেতাদের কথায়। এ নিয়ে সাধারণ কর্মচারীরা হতাশ।নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে দাবি পূরণে সরকারকে বাধ্য করা যাবে না বলে মনে করেছেন তারা।
এবিষয়ে ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলী বলেন, আমরা চেয়েছিলাম রংপুরের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রধান অতিথি করতে। তিনি কর্মচারীদের পক্ষে সংসদে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু একটি পক্ষ রংপুর মহানগরের একজন শ্রমিক নেতাকে প্রধান অতিথি করে পোষ্টার ছাপিয়ে আলাদা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। রংপুরের কর্মচারীরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘তবুও আমি সকালের সমাবেশ শেষে বিকেলে ওই সমাবেশেও যোগদান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের অসহযোগীতায় তা সম্ভব হয়নি।’
সরকারি কর্মচারীদের ১০টি সংগঠন নিয়ে ঐক্য পরিষদ গঠিত।তার মধ্যে একটি সংগঠনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড কর্মচারীদের দাবি আদায়ের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলেও মনে করেন ওয়ারেছ আলী।একই সঙ্গে আগামী ২৭ মে ঢাকায় মহা সমাবেশ সফল হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে রংপুরে সমাবেশ আয়োজনে সমন্বয়হীনতা ছিলো উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতার ওপর এর দায় চাপান ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ও ১১-২০ গ্রেডের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, শুরু থেকে রংপুর সমাবেশের সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো আনোয়ারুল ইসলাম তোতার ওপর। কিন্তু তিনি সমাবেশ সফল করতে কোনো প্রকার আলোচনা বা সভা করেননি।এক পর্যায়ে আমরা রংপুর মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ মজিদকে প্রধান অতিথি করে পোষ্টার ছাপানোর পর একজন এমপিকে প্রধান অতিথি করার কথা শুনতে পাই। তখন আর কিছুই করার ছিলো না।
তবে এই অনৈক্য থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতই বিষয়টির সমাধান করা হবে। কর্মচারীদের নিজেদের স্বার্থেই নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ২৭ মের মহা সমাবেশে এর কোনো প্রভাব পরবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে আনোয়ারুল ইসলাম তোতা বলেন, ‘রংপুরের সমাবেশ সফল করতে রমজান মাস থেকেই আমি কাজ শুরু করি। সকলকে সঙ্গে নিয়ে রংপুরের ৮টি জেলায় আমি প্রচারণা চালিয়েছি। আমার ফেসবুক প্রফাইলে ঢুকলে এর প্রমাণ মিলবে। কেউ যদি অবদান অস্বীকার করে তবে কিছু করার নেই। আজকে আমাদের সমাবেশ সফল হয়েছে, আমার মুখ্য সমন্বয়ক এবং রংপুরের সরকারি কর্মচারীরা সেটা জানেন।’
‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায়ে ঐক্য পরিষদ’-এর ৭ দফা দাবিসমূহ:
১। পে-কমিশন গঠন পূর্বক ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তর্বতীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে।
২। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখাতে হবে।
৩। সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তরের পদ পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে।
৪। টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহাল সহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৫। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।
৬। আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।
৭। বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি
পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত