সিইসি-কাদের, একে অপরকে যা বললেন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশ নিয়েছেন ১০টি দলের নেতারা। এদিন ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সংলাপে আলোচনার একপর্যায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘স্যার’ সম্বোধন করে বলেন, ‘স্যার, আমরা আশা করবো- আপনারা সরকারে থেকে আমাদের (ইসি) সরকারি সাহায্য-সহায়তা দেবেন। আমরা যে সহায়তা চাইবো, তা সবসময় সাগ্রহে দেবেন।’
সিইসির এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ওবায়দুল কাদের ‘হ্যাঁ, দেওয়া হবে’ বলে উল্লেখ করেন। এরপর সিইসি বলেন, ‘যাক, আপনি বলেছেন। এজন্য আমরা আশ্বস্ত বোধ করছি। এ আশ্বাসটা নিয়ে আমরা আগামীতে কাজ করে যাবো।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে এটা একটা সামগ্রিক বিষয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামষ্টিক একটা বিষয়। কাজেই আমাদের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। নির্বাচন কমিশন একা সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যদি না অংশীজনরা তাদের দিক থেকে সহায়তার হাত সম্প্রসারণ করেন।’
নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, সেই সময় (নির্বাচনকালীন) সরকার থাকবে কিন্তু আওয়ামী লীগ থাকবে না। সরকার আর আওয়ামী লীগ এক নয়। নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছ থেকে হেল্প (সাহায্য) নেবে। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেবে না, সেটার প্রশ্নই আসে না।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভাজনটা আছে, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি নিজে উচ্চারণ করতে শুনেছি। তিনি এ ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট। সরকারের তরফ থেকে আমাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে’ বলে উল্লেখ করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি বলেন, ‘আমরা যে সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখি, সেই সহায়তা আদায় করে নেবো। যেই সহায়তা প্রাপ্য, সেই সহায়তা আমাদের দিতে হবে। যদি সেই সহায়তা দেওয়া না হয়, তাহলে সুন্দর ইলেকশন হয়তো হবে না। আরেকটা জিনিস হলো- আপনাদের মাঝে ঐক্য চাচ্ছি, নির্বাচনের মাঠে যেন সবাই থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে বিভিন্ন পার্টির উপস্থিতি এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয় থাকে। যেহেতু আমরা একদিনেই নির্বাচন করবো। সবাই যদি চান চারদিনে ইলেকশন করার, সেটা সম্ভব নয়। কারণ আমরা একটা সংকট দেখি সেন্টারে। সেটা হলো- আমরা পর্যাপ্ত ফোর্স দিতে পারছি না। এত ফোর্স লাগতো না, যদি সবগুলো দল নির্বাচনের কেন্দ্রে এসে দাঁড়াতো, তাহলে তারাই ফোর্স হয়ে যেতেন।’
এদিকে, আজকের সংলাপে অংশ নেওয়া ১০টি দলের মধ্যে চারটি দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের পক্ষে মতামত দেয়। বাকি ছয়টি দলের নেতারা ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে কথা বলেছেন।
ইভিএম প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কখনই ইভিএমের অন্ধ গ্রাহক ছিলাম না। সংলাপে যে আলোচনা হচ্ছে, তা লিপিবদ্ধ করেছি। আলোচনা শেষ হলে আমরা পর্যালোচনা করবো। দেখবো, আমাদের সামর্থ্য কতটা। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সম্পূর্ণ ইভিএম করবো, নাকি ফিফটি ফিফটি করবো, সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএমে ইন্টারনেটের কোনো সম্পর্ক নেই বিধায় হ্যাকিংয়ের কোনো শঙ্কাও নেই। যে সংশয়টা, সেটা গুজব। আমি নিজেও কিন্তু গুজবে বিশ্বাসী। গুজব শুনতে খুব ভালা লেগেছে। আমার জীবনও ওভাবে কেটেছে। এখন যখন আমাকে নিয়ে কথা শুনি, সেগুলো কিন্তু সত্য নয়। অথচ আমি আগে এভাবেই গুজবই বিশ্বাস করতাম। আসলে মানুষের স্বভাবই হচ্ছে, গুজবটা শুনতে ভালোবাসে।’
আগামী আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আগস্ট থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবো। তখন সব নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা কিন্তু কোনো বাজে মতলব নিয়ে আসিনি। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো দলকে এ ধরনের আশ্বাসও কেউ দেননি।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত