সুপারিশে যেসব প্রস্তাব এসেছে তার সবই কর্মকর্তাদের সুবিধা বাড়ানো
সরকারের অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর স্থবিরতা নেমে এসেছে প্রশাসনে। মন্ত্রীদের সৃজনশীল কোনো উদ্যোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে আটকে আছে বদলি, পদায়ন ও তদবিরের বৃত্তে। রুটিন কাজের বাইরে কিছুই হচ্ছে না। সংস্কারকাজ আটকে আছে দীর্ঘদিন থেকে। দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনার সুপারিশ পেতে সাত সদস্যের কমিটি করে সরকার। কমিটির প্রথম দফা সুপারিশে যেসব প্রস্তাব এসেছে তার সবই কর্মকর্তাদের সুবিধা বাড়ানো অর্থাৎ প্রণোদনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনার পাশাপাশি আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্ক জোরদার করার জন্য গত ২৩ জুন সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নতুন পদ সৃজনের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রয়োজন সম্পর্কে সুপারিশ করাও এ কমিটির অন্যতম দায়িত্ব। কমিটি গঠনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনয়ন ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় জোরদারকরণ ও নতুন পদ সৃজনের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়ন।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (মাঠপ্রশাসন) প্রধান করে গঠিত এ কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করেছে। কমিটি ইতিমধ্যে ছয় দফা সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পদ গ্রেড ১-এ উন্নীত করতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তালিকা তৈরি করা।
কমিটির কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ পান। সচিব পদে পদোন্নতি ছাড়া কোনো অতিরিক্ত সচিবের মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রথম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ নেই। এমনকি প্রথম গ্রেডে উন্নীত কোনো দপ্তর বা সংস্থার প্রধান হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেও অতিরিক্ত সচিবরা প্রথম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন না। অথচ অনেক দপ্তর সংস্থার বিভাগীয় কর্মকর্তারা প্রথম গ্রেড পাচ্ছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিবের মঞ্জুরিকৃত পদের একটি অংশ গ্রেড ১-এ উন্নীত করা যুক্তিযুক্ত বলে তারা মনে করেন।
কমিটির দ্বিতীয় সুপারিশে রয়েছে শাখা, অধিশাখা ও অনুবিভাগ বাড়ানোর সুপারিশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনার জন্য সচিবালয়ের স্ট্যান্ডার্ড কাঠামো অনুযায়ী অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখা বাড়াতে হবে। এতে করে সরকারের পরিসর বাড়াতে হবে।
তৃতীয় সুপারিশ হচ্ছে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদায়নযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যা এবং পদসংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক পদসমূহ মঞ্জুরিকৃত পদের অন্তর্ভুক্ত না হলেও ডিপিপি অনুযায়ী এসব পদে সরকারের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ করা হয়। এতে নিয়মিত পদে পদায়নের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নে স্বল্পতা দেখা দেয়। এজন্যই বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক পদগুলো আমলে নিয়ে অতিরিক্ত রিজার্ভ পদ সৃষ্টি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
চতুর্থ সুপারিশ হচ্ছে সব মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগের সংখ্যা নির্ধারণ করে অনুবিভাগ প্রধান হিসেবে যুগ্ম সচিবের স্থলে অতিরিক্ত সচিব করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ।
পঞ্চম সুপারিশের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অধিশাখা ও শাখা পর্যায়ে কর্মকর্তা পদায়নে রুলস অব বিজনেস বা কার্যপ্রণালি বিধিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয় যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা।
সবশেষ সুপারিশে রয়েছে অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখার সংখ্যা নির্ধারণ করতে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিটির সদস্যসহ এপিডি অনুবিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয় ভাগ করে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
কমিটির এসব সুপারিশ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দশম থেকে ১৫তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসন্তোষ রয়েছে। শাখায় উপসচিব, অধিশাখায় যুগ্ম সচিব ও অনুবিভাগ পর্যায়ে অতিরিক্ত সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হলে মধ্য ধাপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ নিয়ে মধ্য গ্রেডের কর্মকর্তারা সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দেখা করে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তার সবই কর্মকর্তাদের প্রণোদনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অতিরিক্ত সচিবদের গ্রেড ১-এর সুবিধা, যুগ্ম সচিবদের অধিশাখা ও উপসচিবদের শাখা প্রদান করা সবই প্রণোদনামূলক কাজ। এগুলো করলে প্রশাসনে জটিলতাও বাড়বে। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হবে। প্রশাসনের গতি ফেরাতে হলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কেন সময়মতো শেষ হচ্ছে না তা একটা একটা করে বিশ্লেষণ করতে হবে। তা না করে একটা কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের কমিটি প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে হওয়া উচিত। সরকারের সাবেক চৌকস কর্মকর্তারা সামগ্রিক বিষয়টি আমলে নিয়ে গতি বাড়াতে কী করতে হবে তার কৌশল বাতলে দিতে পারেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসনে গতিহীনতার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি কাজ নির্ধারিত। কে করবে, কীভাবে করবে, কত সময় নেবে সবকিছুই পূর্ব থেকে বলা থাকে। কাজেই কোন জায়গায় গতিহীনতা, কার কারণে গতিহীনতা সেটা খুঁজে বের করা দরকার।’
সাবেক এ মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘কর্মকর্তাদের সমন্বয়েও কমিটি হতে পারে। তাতে সীমিত পরিসরে কিছু সমাধান মিলতে পারে। তবে ভালো হয় বাইরের বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করলে।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জনপ্রশাসনের যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিনের পর দিন ঝুলে আছে সেগুলো চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন করতে পারলেই প্রশাসনে গতি ফিরবে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কাজের মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন। ১৯৭৯ সালের বিধি দিয়ে প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। কর্মকর্তাদের কর্মজীবন পরিকল্পন নীতিমালা, পদায়ন নীতিমালা, সম্পদের হিসাব নেওয়া, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতাসহ আরও কিছু কারণে প্রশাসনে গতি নেই।
২০১৮ সাল থেকে সরকারি চাকরির আচরণ বিধি সংশোধনের চেষ্টা করছে সরকার। একের পর এক খসড়া করছে, কিন্তু চূড়ান্ত করতে পারছে না। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা। ২০০৮ সালের পর সরকার আর কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়নি। ২০০৮ সালে নেওয়া সম্পদের হিসাবও বিশ্লেষণ করা হয়নি। এ অবস্থায় গত জুন মাসে সব মন্ত্রণালয়ের কাছে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সম্পদের হিসাব নেওয়ার পর এসব হিসাব বিবরণী মূল্যায়নের সক্ষমতা নেই মন্ত্রণালয়গুলোর। তাছাড়া সম্পদের হিসাব বিবরণী নিয়ে সরকারের পক্ষে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। কারণ সরকারি চাকরি আচরণ বিধিমালায় সম্পদ বিবরণী দেওয়ার কথা বলা আছে ঠিকই। কিন্তু না দিলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে তার উল্লেখ নেই। এ কারণে সরকার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে সম্পদের হিসাব চাইলে সংশ্লিষ্টরা আদালতে চলে যান। কার্যকর বিধিবিধান না থাকার কারণে এসব মামলায় সরকার হেরে যায়। বিষয়গুলো জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি চাকরি আচরণ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। সেখানে সম্পদের হিসাব বিবরণী না দিলে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে সে সংশোধনীও রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়াসহ নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে আচরণ বিধিমালার সংশোধনীর বিষয়টি ঝুলে গিয়েছিল। এ সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
প্রশাসনকে জনমুখী ও গতিশীল করতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য ‘কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালা’ প্রণয়ন করছে সরকার। নানা কমিটি করে খসড়া করা হয়েছে। মতামত নেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতেও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ছয় বছর হয়ে গেলেও নীতিমালাটি চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
কর্মজীবন পরিকল্পনা করলে কী লাভ হবে জানতে চাইলে একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। এমন কর্মকর্তা আছেন যিনি দুর্যোগের ওপর বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে শিক্ষায় কাজ করছেন। শিক্ষার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে শ্রম ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন। কর্মজীবন পরিকল্পনা বা ক্যারিয়ার প্ল্যানিং হলে যে কর্মকর্তা যে বিষয়ে পারদর্শী সে সেই বিষয়ে কাজ করবে। কোনো কর্মকর্তা বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলে তাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েই কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং পাওয়া যাবে না। মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছায়নও এ ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। গুচ্ছায়নে যোগাযোগসংক্রান্ত সব মন্ত্রণালয় একটি গুচ্ছে থাকবে। অর্থসংক্রান্ত সব বিভাগ অন্য একটি গুচ্ছে থাকবে। মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছায়ন সম্ভব হলে কর্মকর্তাদের কর্মজীবন পরিকল্পনা সফলতার সঙ্গে প্রয়োগ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কর্মজীবন পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে প্রশিক্ষণ। বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মনোনয়ন পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে চাকরিজীবন শুরু করেন। খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হলে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু হবে। চাকরিজীবনের সব পর্যায়ে অর্থাৎ পদোন্নতি, গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং, উচ্চশিক্ষা, মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি ও বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত ফল বেশি গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তাদের যোগদানে আগ্রহী করতে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের পদায়নের সুবিধার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে পাঁচটি গুচ্ছে ভাগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পড়াশোনাসহ বিশেষ দক্ষতা বিবেচনায় গুচ্ছভিত্তিক মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে। প্রতি বছর শূন্যপদের সংখ্যা ও সম্ভাব্য অবসরগ্রহণের সংখ্যা নির্ধারণ করে নতুন নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধান রয়েছে খসড়া কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালায়।
আইন ও বিভিন্ন বিধি অনুযায়ী, পিএসসি শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন শূন্যপদ পূরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়। এ কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি অনুষদ সুনাম কুড়ালে আরও কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে প্রতিযোগিতায় নামে। একপর্যায়ে সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ পড়াশোনা করানো, চাকরির প্রার্থী বাছাই করা নয়। এ চিন্তা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে আউটসোর্সিং বন্ধ করার আদেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় পিএসসির কাঁধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব চাপানোর।
এ বিষয়টি আড়াই বছর ধরে ঝুলে রয়েছে মন্তব্য করে একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি এসে ঠেকেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে পিএসসি তাদের চূড়ান্ত মতামত দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রেখেছে।
পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে পিএসসিকে যুক্ত করলে দুর্নীতি কমবে, কিন্তু অনেক ধরনের জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা বাড়বে। পিএসসি একটি বিসিএস শেষ করতেই তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় নিচ্ছে। এজন্য পিএসসি যথেষ্ট চাপের মধ্যে থাকে। আলাদা অনুবিভাগ হলেও কমিশন একটাই থাকছে, সিদ্ধান্তও এক জায়গা থেকে হবে। তাছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পদের ধরন ভিন্ন। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পদমর্যাদা নিয়েও রয়েছে অনেক জটিলতা। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির গ্রেড ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও এক নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে অষ্টম বা দশম শ্রেণি পাস। আমরা তাদের কী পরীক্ষা নেব। তবে পিএসসিকে এ দায়িত্ব নিতেই হবে কি না তা নির্ধারণ করতে হবে সরকারকেই। বিষয়টি ঝুলিয়ে না রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিষ্পত্তির দিকে যেতে হবে।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত