সেই রাতের বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফেরা ২২ যাত্রী
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেঁচে ফেরা ২২ জন যাত্রী সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। রবিবার বরগুনা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে ঘটনার লিখিত ও মৌখিক বর্ণনা দেন তারা।
লঞ্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা বেতাগী পৌরসভার বাসিন্দা মো. সাহেব আলী লিখিত বর্ণনায় বলেন, রাত তিনটার সময় লঞ্চের ভেতর ‘আগুন, আগুন’ শব্দে তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন, পেছনের একটা স্থান দিয়ে আগুন ওপরে উঠে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যে পাশে আগুন নেই, সেই পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তখন নদীতে কিছু লোককে সাঁতার কাটতে দেখেন এবং চারপাশে মানুষের আহাজারি শোনেন। তিনি পর্দার রশি ধরে নিচে নেমে দাঁড়ান এবং কিনারা কোথায়, তা দেখার চেষ্টা করেন। এমন সময় নদীর তীরে মানুষের লাইটের আলো দেখতে পান। তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। সে সময় আরও কয়েকজনকে ঝাঁপ দেওয়ার শব্দ শুনতে পান। অনেক সময় নদীতে সাঁতার কাটার পর কিনারায় পৌঁছান তিনি। লঞ্চটির ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে লিখিত জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন।
বরগুনার হাইস্কুল সড়কের বাসিন্দা মো. সানাউল্লাহ তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, তিনি লঞ্চটির কেবিনে ছিলেন। লঞ্চ ছাড়ার পরপরই একজন চালক মুঠোফোনে বলছিল, ‘স্যার, ইঞ্জিন ৪০০ পাওয়ারে চলে।’ চাঁদপুর থেকে অনেক যাত্রী উঠেছেন। সব মিলিয়ে দুই হাজারের মতো যাত্রী ছিলেন লঞ্চে। লঞ্চটি চলা অবস্থায় অস্বাভাবিক শব্দ করছিল। এ সময় কয়েকজন যাত্রী চালকের কাছে জানতে চান, ইঞ্জিনে এমন শব্দ কেন! চালক বলছিলেন, কোনো সমস্যা নেই, ইঞ্জিনে কাজ করানো হয়েছে। একজন ইঞ্জিনিয়ার সঙ্গে আছে। এরপর ঘুমিয়ে পড়েন সানাউল্লাহ। রাত তিনটার দিকে লোকজনের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখেন, মানুষ ছোটাছুটি করছে। ইঞ্জিনরুম থেকেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
লঞ্চে থাকা আরেক যাত্রী সাদিকুর রহমান বলেন, বড় লঞ্চ কম শক্তির ইঞ্জিন দিয়ে চালানোর কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে দুটি লঞ্চ প্রতিযোগিতা হয়, বেপরোয়া গতিতে চলানো হয়। এসব কারণেও লঞ্চে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পাথরঘাটা রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সঞ্জিব চন্দ্র হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চের বারান্দায় বসা ছিলেন তিনি। লঞ্চে বিকট শব্দ হলে তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন-আগুনের লেলিহান শিখা তার দিকে দ্রুতগতিতে আসছে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পরে। ধোঁয়ায় আর কিছু দেখা যায় না, তিনি পর্দার কাপড় খোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। পরে জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় সাঁতার কাটার পর তিনি তীরে ওঠেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে তদন্ত দলের সদস্যসচিব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক (বন্দর) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী ২২ যাত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। পাশপাশি লঞ্চ পরিদর্শন করা হয়েছে। আগুনের উৎপত্তি টেকনেশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কমিটি সবকিছু বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত