হলে হলে শিবিরের মাংস বিতরণ, জরুরি বৈঠকের পর প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সিদ্ধান্ত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণ করেছে ইসলামী ছাত্র শিবিররাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণ করেছে ইসলামী ছাত্র শিবির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণ করেছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সকালে ছেলেদের ১১ হলের নিরাপত্তা প্রহরীদের এই মাংস দিয়ে যান তারা। এ সময় মাংসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতির পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়। এ ঘটনা জানাজানির পর জরুরি বৈঠক করে মাংসগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাধ্যক্ষ পরিষদ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা জায়, প্রতি বছর ঈদে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকলেও এবার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার ক্যাম্পাসে ঈদ পালন করেন ২২৬ শিক্ষার্থী। তারা আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন শিবির কর্মী এসে ছেলেদের ১১টি হলের নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে দুই থেকে তিন ব্যাগ করে মাংস দিয়ে যায়। এ সময় তারা রাবি শিবির সভাপতির পক্ষ থেকে একটি চিঠিও দিয়ে যায়। চিঠি খুলে শিবিরের মাংস বিতরণের বিষয়টি জানার পর অনেকে মাংস নিতে আপত্তি জানান। কেউ কেউ আবার মাংস শিক্ষার্থীদের না দিয়ে বাইরের মানুষদের দিয়ে দেন।
জানতে চাইলে জিয়া হলের প্রহরী রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে দু-তিন ছেলে মাংস নিয়ে আসে। তারা বলে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য আবুল হাশেম স্যারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা একটি চিঠিও দেয়। চিঠি খুলে দেখি এতে শিবিরের সভাপতির বার্তা লেখা আছে। পরবর্তী সময়ে আমরা মাংস ছাত্রদের না দিয়ে রাস্তার এক ফকিরকে দিয়ে দিয়েছি।
কে এই আবুল হাসেম
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একাধিক সদস্য জানান, অধ্যাপক আবুল হাশেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স (বর্তমান ইই) বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জামায়াতের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তিনি।
আবাসিক হলগুলোতে মাংস বিতরণে বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে আবাসিক হলে শিবিরের মাংস বিতরণের বিষয়টি জানাজানি হলে জরুরি বৈঠকে বসে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। বেলা সাড়ে ১১টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যেসব প্রহরী মাংস রিসিভ করেছেন তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর জরুরি বৈঠকে বসি। এতে হলের নিরাপত্তা জোরদারসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক প্রাধ্যক্ষ বলেন, শুধু ছেলেদের হলগুলোতে শিবির মাংস বিতরণ করেছে। তারা হলের গার্ডের কাছে মাংস দিয়েছিল। এরমধ্যে একটি হলের গার্ডরা মাংস নেয়নি। আবার একটি হলের গার্ড প্রাধ্যক্ষকে না জানিয়ে মাংস ভাগ করে দিয়েছিল। এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রক্টরের নির্দেশে সব মাংস এখন ক্যাফেটেরিয়ার ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মিটিংয়ে হলগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদৌসী মহলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে ফাঁকা ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিরের মাংস বিতরণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও হল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আছে, হল কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এরপরেও শিবির মাংস বিতরণ করলো, বিষয়টি বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল মনিটরিং আরও জোরদার করা।
শিবিরের সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, যখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নেই, তখন শিবির চোরের মতো এসে মাংস দিয়ে গেছে। তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই প্রকাশ্যে আসার। স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিহত করতে রাবি ছাত্রলীগ সবর্দা প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমি সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি শুনেছি। তারা চুরি করে এসে মাংস দিয়ে যাওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত তা বের করতে আমরা ক্যাম্পাসে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা চেয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিষয়টি শুনেছি। সাধারণত চমক সৃষ্টির জন্য এসব কাজ করা হয়। হলের সার্বিক পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ পরিষদের। এরপরও নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত